মৃত্যু ভয় সারাক্ষণ চেপে বসেছিল মনে

উদ্ধার হওয়া জেলেদের প্রতিক্রিয়া

আনোয়ারা প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আবদুল মান্নান পেশায় একজন জেলে। বিশাল সমুদ্রের জলরাশির সাথে যার মিতালি। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা সাদিয়া (২০) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মান্নান। বিয়ের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় নববধূকে ছেড়ে জীবিকার জন্য বাধ্য হয়ে মান্নানকে মাছ ধরার পেশায় বঙ্গোপসাগরে সাগরে পাড়ি দিতে হয় গত ৩ জানুয়ারি। আনোয়ারার গহিরা উপকূলের সরেঙ্গা থেকে ১৩ মাঝিমাল্লা ‘মাজননী’ নামের একটি ফিশিং ট্রলারে করে সাগরে রওনা হওয়ার একদিন পর তাদের ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সাগরে ভাসতে ভাসতে টানা ১০ দিন পর মিয়ানমারের জেলেরা তাদের উদ্ধার করেন। তার আগের এই ১০ দিনই ছিল ১৩ মাঝিমাল্লার জীবনের চরম ভীতিকর দুর্দিন। আব্দুল মান্নান বলেন, প্রতিটি মুহূর্ত ভয়ে আর অনিশ্চয়তায় কাটিয়েছি। মনে হয়েছিল জীবনে পরিবারের কারো সাথে আর দেখা হবে না। প্রতিমুহূর্তে আল্লাহর কাছে কান্না করেছি আর্জি দিয়েছি। প্রতিমুহূর্তে আমার মনে পড়েছে আমার স্ত্রী সাদিয়ার চেহারা। পরিবারের কাছে ফেরার জন্য আল্লাহর কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়েছি। আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে দিলেন।

মাজননী’ ট্রলারের মাঝি নুরুজ্জামান প্রকাশ কালু মাঝি বলেন, ৩ জানুয়ারি সাগরে রওনা হওযার পরের দিনই আমাদের ট্রলারের শেপ ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে টানা ১২দিন আমরা সাগরে ভেসেছি। আশেপাশে কোনো ট্রলার পাইনি। অনেক দূরে বড় বড় জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখতে পেতাম। নানাভাবে তাদের সংকেত দিয়েও কারো সাড়া মেলেনি। একপর্যায়ে আমরা বাঁচার আশা ছেড়ে দিই। তিনি আরো বলেন, ট্রলারে খাবারও প্রায় শেষ হয়ে যায়। জীবন ভিক্ষা চেয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করি। হঠাৎ দেখা মিলে মিয়ানমারের একটা ট্রলারের। তারা আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। নিজেদের ট্রলারের সাথে আমাদের ট্রলার টেনে টেনে মিয়ানমারের উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। মাঝপথে রশিটা ছিঁড়ে আমরা আবারও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। পরে মিয়ানমার নৌবাহিনীর আরেকটি ট্রলার এসে আমাদের উদ্ধার করে উপকূলে নিয়ে যায়। তারপর মিয়ানমার নৌবাহিনী আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সাথে যোগাযোগ করার পর আমাদেরকে হস্তান্তর করে। আসার সময় তারা আমাদের খাবার সামগ্রী উপহার দিয়ে দেন। আর বাংলাদেশ কোস্টগার্ড আমাদের সেন্ট মার্টিন ঘাটে নিয়ে আসে। গতকাল সকালে আমরা বাড়ি পৌঁছেছি; আলহামদু লিল্লাহ।

গতকাল বুধবার সকালে আনোয়ারার উপকূলে ১৩ মাঝিমাল্লা ফিরে এলে আনন্দ ধারার সৃষ্টি হয় স্বজনদের মাঝে। তাদের জড়িয়ে ধরে কান্নার রোল ওঠে ওই সময়। তবে ওই কান্না ছিল আনন্দের। এই দৃশ্য দেখে এলাকার সাধারণ মানুষও তখন কেঁদেছেন। এ সময় উৎসুক এলাকাবাসীও তাদের দেখতে আসেন। উদ্ধার হওয়া মাঝিমাল্লারা হলেন, নুরুজ্জামান প্রকাশ কালু মাঝি (৫৫), মো. আব্দুল মান্নান (৩০), মো. কালু (৩২), রাশু মিয়া (২৫), মোরশেদ (২২), আলী হোসেন (৩০), রায়হান (২১), জালাল (২৮), মহিউদ্দিন (৩৫), হান্নান বাবুর্চি (৩২), মো. রাশেদ, মো. বুরহান, আবুল মনসুর। ট্রলার মালিক মিজানুর রহমান নিজাম বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় মাঝির ফোন পেয়ে আমি এশারের নামাজ পড়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্য রওনা দিই। রাত ১টার দিকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাই। ট্রলারটি মেরামতের কাজ করে বুধবার ১০টার দিকে সরেঙ্গাতে পৌঁছাই। উদ্ধার হওয়া সবাই সুস্থ আছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুদিনে হার্টের রিং পরানো হলো ৬ জনের, এনজিওগ্রাম ১১ জনের
পরবর্তী নিবন্ধফিজিওথেরাপি সেন্টারে রোগী ভর্তি, পাঁচলাইশের দুই প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ