রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে সশস্ত্র সংগঠন ‘আরসার কিলার গ্রুপের’ প্রধান সমিউদ্দিনের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি দল অংশ নেয় বলে জানিয়েছে র্যাব। ‘কিলার গ্রুপের’ প্রধান নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনকে রোববার গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার দুপুরে র্যাব–১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, র্যাব–১৫ কঙবাজারের কুতুপালং এলাকার একটি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মুহিবুল্লাহ হত্যার সমন্বয়কারী ও হত্যাকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আরসার কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সমিউদ্দিন মিয়ানমারের সাবের আহমেদের ছেলে। তাঁর কাছ থেকে সাতটি দেশি–বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, আরসার প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে সমিউদ্দিন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সমন্বয় ও সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সমিউদ্দিনসহ প্রায় ১২ জনের একটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মাস্টার মহিবুল্লাহর অফিসে প্রবেশ করে মহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে মুহিবুল্লাকে প্রথম গুলি করে সমিউদ্দিন। পরবর্তীতে তারা সেখান থেকে আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাব জানায়, আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে ভয়ংকর ও সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় ২০ জনের একটি ‘গান গ্রুপ’। যা ‘কিলার গ্রুপ’ নামেও পরিচিত ছিল। ওই গ্রুপের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন সমিউদ্দিন। তার নেতৃত্বে গ্রুপটি বিভিন্ন সময় টার্গেট কিলিংয়ে অংশ নিতো। তাদের কথামতো কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিমকে অপহরণ করে শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। আর মুক্তিপণ না দিলেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রায় ১৫০ জন আরসার সদস্য সক্রিয় রয়েছে।
এছাড়া ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। ওই হামলায় একজন র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। এ হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি জড়িত সমিউদ্দিন। এছাড়া মাঝি শফিক, জসিম, সেলিম, নুর বশর, সালাম, সলিম, কালা বদ্দা, রহিমুল্লাহ ও খালেদ হত্যাকাণ্ডেও জড়িত তিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ৬ জন হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন হত্যায় জড়িত বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেন সমিউদ্দিন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সমিউদ্দিন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক। ২০১৬ সালে মিয়ানমারে অবস্থানের সময় আরসায় যোগ দেয়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবশ করে শরণার্থী ক্যাম্প–৭ এ বসবাস শুরু করেন। ক্যাম্প–১, ২, ৬ ও ৭’র আরসার ‘গান গ্রুপ’ কমান্ডার হিসেবেও নেতৃত্ব প্রদান করতেন তিনি। তার নেতৃত্বে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় ও সরবরাহ করা হত। তিনি ২০১৬ সালে আরসার হয়ে বিজিপি (মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ) ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বেশকিছু অস্ত্র লুট করে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেন। তার বিরুদ্ধে উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।