মুহাম্মদ আবদুর রহমান (১৯৪২–২০২১)। বহুমাত্রিক অনন্যসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। কী শিক্ষা, কী সমাজসেবা, কী নেতৃত্ব, কী সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। সততা, নিয়ম, নীতি ও শৃঙ্খলাকে যিনি আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন সারাটি জীবন। সমাজে জনগণের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুর রহমান। শিক্ষকতা, সমাজসেবা, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে ছিল তার জীবন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে পটিয়া পৌরসভায় তাঁর জন্ম। ম্যাট্রিক পাস করেই নিকটে মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। কিছুদিনের ব্যবধানে মোহসেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে আসেন; এ বিদ্যালয়ে পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হন। এই বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত অবস্থায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সমাজের কল্যাণে সময় অতিবাহিত করেন। এলাকার মসজিদ, কেন্দ্রীয় ঈদ জামাতসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন ধার্মিক। তিনি গারাংগিয়া হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র কাছে তরিকতের দীক্ষা গ্রহণ করেন। সেই সুবাদে পটিয়া গারাংগিয়া খানকাহ, মসজিদ, এতিমখানা তথা গারাংগিয়া ধর্মীয় কমপ্লেক্সের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। দীর্ঘদিন এখানকার সেক্রেটারীর দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পটিয়া বাদেও তিনি গারাংগিয়া ও চট্টগ্রাম শহরে তরিকতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকতেন, অবদান রাখতেন। তিনি সমাজসেবার পাশাপাশি যেকোনো ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতেন। চট্টগ্রামের অরাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম মনীষা স্মৃতি পরিষদ ও হজ্বযাত্রী কল্যাণ পরিষদসহ আরও একাধিক সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় আমেরিকা, ভারত ও সৌদিআরব ভ্রমণ করেন। তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হজ্বব্রত পালন করেন এবং একাধিকবার ওমরা পালন করেন। ব্যক্তিজীবনে তাঁর সততা কর্মনিষ্ঠ মনোভাব যেকোনো কাউকে উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করে। তাঁর ব্যক্তিত্বের স্ফূরণ, জ্ঞানের গভীরতা, সর্বোপরি পাণ্ডিত্য মোহিত হওয়ার মতো। তাঁর অপরিসীম কল্যাণ ও শুভবোধ মানুষকে উদ্দীপ্ত করে সতত। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই এপ্রিল অনন্যসাধারণ মানবিক গুণের অধিকারী এ ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন।