মুশফিক যেন পুরানো চাল ভাতে বাড়ে

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ১৮ জুন, ২০২৫ at ১২:১৮ অপরাহ্ণ

কথায় আছেনা পুরানো চাল ভাতে বাড়ে। সে প্রবাদটা যেন একেবারে যথাযথ মুশফিকুর রহিমের জন্য। গল টেস্ট শুরুর আগেরদিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক এবং কোচ বলেছিলেন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে এই সিরিজে মুশফিকের দায়িত্বটা অনেক বড়। সে দায়িত্বটা যেন দারুণভাবে পালন করলেন মুশফিক। দলের যে আস্থা সেটার যেন যথার্থ প্রতিদান দিলেন মুশফিক। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব করলে খুব বেশিদিনের বিরতি নয়। ঠিক ১০ মাস আগে গত বছর আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। তারপর থেকে হঠাৎ রানখরায় ভুগতে থাকে দলের সবচাইতে সিনিয়র এই সদস্য। দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অন্যতম সফল ও অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে আর বড় ইনিংস বেরিয়ে আসেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ‘বিগ হান্ড্রেডের’ পরের ১৪ ইনিংসে ১৩ বার ব্যাট করা ইনিংস গুলো ছিল যথাক্রমে (, ২২, , ১৩, ১১, ৩৭, ১১, ৩৩, , , , , ৪০) । মুশফিকের সাকুল্যে সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৮৮ রান। যার গড় ছিল ১৫.৬৬। বিশেষ করে শেষ ৪ ইনিংসে দেশের এ সিনিয়র ক্রিকেটারের ব্যাট আর হাসেনি। ওই ২ টেস্টে ৩ বার দুই অংকেই (, , ) পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। মনে হচ্ছিল তার ক্যারিয়ারের সূর্য বুঝি ধীরে ধীরে অস্তাচলের দিকে চলে যাচ্ছে। সামপ্রতিক সময়ে টিটোয়েন্টি আর ওয়ানডে থেকে সরে দাঁড়ানো এ অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সামনে আছে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার হাতছানি। কিন্তু অফফর্মের কারণে তার পক্ষে বাকি ৩ টেস্ট (এটা মুশফিকের ৯৭ নম্বর টেস্ট) খেলা সম্ভব হবে কিনা, এমন সংশয়ও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম, সাধনা আর আত্মনিবেদন দিয়ে বয়সকে অতিক্রম করে মুশফিক দেখিয়ে দিলেন এখনো বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য আছে তার। অবশেষে আবার হাসলো মুশফিকুর রহিমের ব্যাট। তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরি। গতকাল গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আবার সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুশফিক। টেস্ট ভেন্যু হিসেবে টিম বাংলাদেশের জন্য বেশ পয়মন্ত গল। এই মাঠে নিজেদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার সাথে সমান তালে লড়ে ড্র করে করেছিল বাংলাদেশ। টেস্টে লঙ্কানদের সাথে সেটাই ছিল টাইগারদের প্রথম নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যে বলীয়ান হয়ে খেলে ম্যাচ ড্র করা। কুমার সাঙ্গাকারা (১৪২), লাহিরু থিরিমান্নে (১৫৫) আর দিনেশ চান্দিমালের (১১৬) তিন সেঞ্চুরিতে লঙ্কানদের প্রথম ইনিংসে তোলা ৫৭০ রানের জবাবে ৬৩৮ রান করে ম্যাচ ড্র করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সে অসাধ্য সাধন হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি (২০০), মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৯০, নাসির হোসেনের ১০০ রানের ইনিংসে ভর করে। সেই গলে মুশফিক ফিরলেন রাজকীয়ভাবে। তুলে নিলেন আরো একটি সেঞ্চুরি। সাফল্যের স্বর্গে গিয়ে যেন আবার নিজেকে ফিরে পেলেন এ অভিজ্ঞ ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে দারুণ জুটি গড়ার ক্ষেত্রে মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি করেন ৮৪ বলে। মেরেছেন ৩টি চার। এরপর ধীরে ধীরে শান্তর সাথে এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত ১৭৬ বলে তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের ১২ তম সেঞ্চুরি। ১০৫ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিককের উপরও নির্ভর করছে কতদূর যাবে বাংলাদেশের ইনিংস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেড় বছর আর ২১ ইনিংস পর শান্তর অসাধারণ সেঞ্চুরি
পরবর্তী নিবন্ধতাণ্ডবের সিয়ামকে নিয়ে সিনেমা চান ন্যান্সি, যা বললেন রাফী