মুশতাক অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করে লিখতেন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে মৃত্যুর কারণ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ জানতে ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, কী কারণে কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু হলো, তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই জানা যাবে। গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় নব নির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।
কারাগারে থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু কীভাবে হলো? এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি না?- এ দুটি প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হল, যে লেখকের কথা বললেন, মুশতাক আহমেদ; তিনি আগেও দুই-একবার তার লেখনিতে আইনশৃঙ্খলা কিংবা অন্যের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করেছিলেন। সেজন্য অনেকেই মামলা করেছিলেন। সমপ্রতি ২০২০ সালে যে মামলাটি হয়েছিল সেই মামলার জন্য তিনি কাশিমপুর জেলখানায় অন্তরীণ ছিলেন। আমাদের আইজি প্রিজন থেকে জেনেছি, হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করলে কারা হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অবস্থা আরেকটু খারাপের দিকে গেলে গাজীপুর তাজউদ্দিন মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি আছে কি-না তা তদন্ত করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব মৃত্যুর বিষয়েই এনকোয়ারি হয়। একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলুন বা স্বাভাবিক মৃত্যু বলুন, নানা প্রশ্ন আসে। যে কোনো মৃত্যুর ঘটনায়, কারাগারে হোক বা এক্সিডেন্ট হোক, একটা পোস্টমর্টেম হয়। পোস্টমর্টেমের পর সঠিকভাবে আমরা বলতে পারব কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে। এনকোয়ারি কমিটি প্রয়োজন বোধে করব। কালকে তো হল, নিশ্চয় এটার ব্যবস্থা আমরা করতে পারব।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় বিচারের মুখে থাকা মুশতাক আহমেদ কারাবন্দী অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান। কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা মুশতাকের হাত দিয়েই কুমির রপ্তানি শুরু হয়। এ বিষয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি। মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ মে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ‘সরকার বিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়। র‌্যাবের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃক্সখলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য অনেকে অনেক রকম কাজ করে যাচ্ছে। আল-জাজিরা যে নিউজ দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তা বিশ্বাস করেনি। এদেশের মানুষ আল-জাজিরা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সবগুলোই আমরা খতিয়ে দেখব। কেন এই মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে তা তদন্ত করে দেখছি। আল জাজিরার প্রতিবেদন তৈরিতে জড়িত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশে থেকে কারা এই মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে সেটা নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শক্তভাবে কাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধ ১৩৭টি রেলস্টেশন চালুর উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধষোলশহরে জেলা পুলিশ সুপারের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন