মুরাদপুরে অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল

রইস উদ্দীনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে ছাত্রসেনার কর্মসূচি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, পর্যটক এক্সপ্রেস আটকে ছিল ২ ঘণ্টা ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি অবরোধকারীদের

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৬ মে, ২০২৫ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দীনের ‘হত্যাকারীদের’ গ্রেপ্তারের দাবিতে নগরের মুরাদপুরে সড়ক অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। অবরোধকারীদের লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইটপাটকেল ছুড়ে অবরোধকারীরা। এসময় ধাওয়াপাল্টাধাওয়া হয়েছে উভয়ের মধ্যে। গতকাল সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের দাবি, সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করায় অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অবরোধকারীরা দাবি করেছেন, পুলিশের ব্যারিকেডের ভেতর থাকা কিছু মুখোশধারী ও ‘লাঠিয়াল বাহিনী’ তাদের উপর হামলা করেছে। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে অবরোধ চলাকালে নগরের ষোলশহর স্টেশনে ২ ঘণ্টা আটকা পড়ে আন্তঃনগর পর্যটক একপ্রেস ট্রেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ হয় পথচারীদের।

জানা গেছে, মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনের ‘হত্যাকারীদের’ গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার পূর্বঘোষিত সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ছিল। এতে যোগ দেয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতও। গতকাল সকাল থেকে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসি, নতুন ব্রিজ, সল্টগোলা ক্রসিং, একে খান গেটসহ নগরের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা। তবে মুরাদপুর ছাড়া কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদপুরে পুলিশ অবরোধকারীদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলেন। এ সময় অবরোধকারীদের সঙ্গে তাদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে অবরোধকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনীর একটি দল।

সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার পর অবরোধকারীদের একটি অংশ বিবিরহাট, সুন্নিয়া মাদ্রাসা গেইটের দিকে এবং আরেকটি অংশ মির্জপুল এলাকার দিকে সরে যায়। অবরোধকারীরা সরে যাওয়ার পর সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এসময় বেশ কয়েকজনকে আটক করতে দেখা গেছে। এর আগে অবরোধকারীরা চট্টগ্রামদোহাজারী রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। রেললাইন অবরোধ করায় ষোলষহরে কঙবাজারগামী আন্তঃনগর ‘পর্যটক এঙপ্রেস’ ট্রেন আটকা পড়ে। সকাল ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে আটকে থাকার পর দুপুর আড়াইটার দিকে ট্রেনটি কঙবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন আজাদীকে বলেন, ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি পুলিশের ব্যারিকেডএর ভেতর সাদা পোশাকে থাকা কিছু মুখোশধারী সন্ত্রাসী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে আমাদের শান্ত নেতাকর্মীদের উপর ককটেল নিক্ষেপ করেছে। আমাদের প্রশ্ন এসব মুখোশধারী কারা? এসব মুখোশধারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।

তিনি বলেন, দুপুর ১টার দিকে আমরা সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এর সাথে বসেছি। সেখানে আমরা বলেছি, আমাদের আন্দোলন সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের আন্দোলন মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনের হত্যার বিচার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে। রইস উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করলে সেই ক্ষোভ প্রশমিত হবে এবং মানুষ শান্ত হবে। আমরাও শান্তি চাই।

মুরাদপুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, তাদের (অবরোধকারী) সবাই বুঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তারা বুঝবে না, রোড ব্লক করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবে। শেষে সিনিয়র অফিসারদের আদেশে টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করি এবং লাটিচার্জ করি। পরে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। তারা চায় না মানুষের দুর্ভোগ বাড়ুক, সে জন্য তারা পুলিশের পক্ষে আছে। ‘কতসংখ্যক মানুষ সড়ক অবরোধ করতে আসে’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০০২০০ হবে।

এদিকে সকাল ১০টার দিকে বন্দর থানার সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায়ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার খবর পাওয়া গেছে। এতে সড়কে আটকা পড়ে বন্দরমুখী আমদানিরপ্তানি পণ্যবোঝাই অনেক পরিবহন। এছাড়া সকালে ইপিজেড ইশান মিস্ত্রি হাট এলাকায় সড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ইশান মিস্ত্রি ঘাট সড়কের পাশে কিছু লোকজন দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ স্লোগান দিয়েছে। পুলিশের অবস্থান ছিল। তারা কেউ মূল সড়কে আসেনি। তাই যান চলাচলে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।

উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল গাজীপুরের হায়দারাবাদ এলাকায় রইস উদ্দিনকে গাছে বেঁধে মারধর করে একদল মানুষ। পরে তাকে পুলিশের সোপর্দ করে। পরদিন ভোরে কারাগারে তার মৃত্যু হয়। রইসের মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত’ হত্যাকাণ্ড দাবি করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত।

আজ কালো পতাকা মিছিল : গতকালকের কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা।

গতকাল বিকেলে নগরের চেরাগী পাহাড় শাহ আনিস মসজিদ মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছেঅবিলম্বে রঈস উদ্দিন হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার করা, হামলায় জড়িত পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে বিচার করা ও গ্রেপ্তারকৃত সকল ছাত্রসেনাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআতের মিডিয়া সেলের প্রধান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে ১৪ জন, চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে ১৩ জনসহ সারাদেশে ছাত্রসেনা, যুবসেনা ফ্রন্টসহ সুন্নী ৩৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাহেদুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একদল চিহ্নিত গোষ্ঠির কিছু উগ্র সন্ত্রাসী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীদের উপর হামলায় অংশ নেয়, যা পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ অহিংস কর্মসূচিকে সহিংস করতে চায়। আপনারা তাদের আইনে সোপর্দ করুন। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ছাত্রসেনার অবরোধে সমর্থন দিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বিভিন্ন দরবারে সূফিবাদী জনতা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। দেশের মহাসড়কসমূহ তথা ঢাকাচট্টগ্রাম, ঢাকাসিলেট, ঢাকারংপুর, চট্টগ্রামকঙবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের অধিকাংশ সড়কমহাসড়কে অবরোধে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। রেলপথনৌপথেও অবরোধ পালিত হয়। বিভিন্নস্থানে অবরোধকারীদের উপর উপর হামলা হয়েছে দাবি করে বলা হয়, পুলিশি আক্রমণে শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলন আহলে সুন্নাত কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা এনাম রেজা, সাবেক সহসভাপতি আদনান তাহসিন আলমদার, সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম, সাবেক আইটি সম্পাদক সামশুল আরেফীন খালেদ, অর্থ সম্পাদক সোওয়দ মুহাম্মদ তারেক, দাওয়াহ সম্পাদক মুহাম্মদ ওসমান, সদস্য মিনহাজুল আবেদীন, মুহাম্মদ আরমান হোসাইন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুরের ভেলায় নিজ শহরে সোলসের ৫০ বছর
পরবর্তী নিবন্ধমূল্যস্ফীতি কমে ৯.১৭ শতাংশ ২৬ মাসে সর্বনিম্ন