মুঠোশিক্ষকের ভূমিকায় চ্যাটজিপিটি

জান্নাতুল মাওয়া | সোমবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

প্রযুক্তির অগ্রগতি শিক্ষা ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন, উন্মোচন করেছে শিক্ষার নতুন দিগন্ত। আজকের শিক্ষার্থীরা এখন আর কেবল বই ও ক্লাসরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তারা তথ্য ও জ্ঞান অর্জনের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ের জন্য চ্যাটজিপিটি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক চ্যাটবট, যেটিকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মুঠো শিক্ষক বলা যেতেই পারে।

চ্যাটজিপিটির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এটি ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের প্রতি দিন উপলব্ধ এবং উন্মুক্ত। শিক্ষার্থীরা যখনই কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হন, তখন তারা সহজেই এই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে তাদের প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন। এই ডিজিটাল মুঠো শিক্ষক তাদের সহায়তা প্রদান করে গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভাষাসাহিত্য থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত করতে পারে।

এছাড়া, চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীদের জন্য সহজবোধ্য ও দ্রুত উত্তর দিতে সক্ষম। এটি যে কোনো বিষয়ের জটিলতাকে সরলভাবে ব্যাখ্যা করে, ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই বিষয়বস্তুকে বুঝতে পারে। তবে এই মুঠোশিক্ষক চ্যাটজিপিটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি মানব শিক্ষক এর মতো আবেগ, অভিজ্ঞতা ও মনস্তত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। শিক্ষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো শিক্ষার্থীদের মনে বিশ্বাস ও উৎসাহ জোগানো। চ্যাটজিপিটি এই মানবিক সম্পর্ক তৈরি করতে অক্ষম, তাই এটি সম্পূরক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, প্রতিস্থাপন হিসেবে নয়।

এছাড়া, তথ্যের সঠিকতা নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। চ্যাটজিপিটি যে সব সময় সঠিক উত্তর বা সমাধান প্রদান করে থাকে এমনটা নয়। তাই শিক্ষার্থীদের এটি ব্যবহার করার সময় সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক হলেও, শিক্ষার্থীদের নিজেদের বিচারবুদ্ধি এবং সূত্র যাচাই করার দক্ষতা বিকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুরোপুরি ভাবে এই মুঠো শিক্ষক এর উপর নির্ভরশীল না হয়ে, জ্ঞান নির্ভর শিক্ষার সহায়ক হিসেবে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করা উচিত।

বর্তমানে, শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রযুক্তির ব্যবহার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি শিক্ষাকে আরও সাশ্রয়ী, সহজপ্রাপ্য করেছে। ডিজিটাল যুগের এই মুঠো শিক্ষক যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে এটি শিক্ষার প্রক্রিয়াকে অধিক কার্যকর ও উপভোগ্য করে তুলতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবিকা নয় জীবন
পরবর্তী নিবন্ধবেগম রোকেয়া মহীয়সী আলোকিত নারী