মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয় বীর বাঙালির অহংকার। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত বিজয়ের গৌরব বাঙালি অর্জন করে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সমঝোতার ভিত্তিতে স্বাধীন হওয়া দেশ পৃথিবীতে অনেক আছে। কিন্তু মরণপণ লড়াই করে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে শত্রুসেনাকে পরাজিত করে বিজয় অর্জনের গৌরব সকলের নেই। যারা মরণপণ লড়াই করে এদেশের স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিল তাদের অধিকাংশই সময়ের আবাহনে অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। যারা জীবিত, তারাও এখন বয়োবৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মিছিলে শামিল হচ্ছেন একের পর এক।
আর এক থেকে দেড় দশক পর হয়তো আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে নাও থাকতে পারেন। আমাদের উচিৎ জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথাগুলো আরো গুরুত্বের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমগুলো সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা জানি, ১৯৭৫ এর পর স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুর দোসরেরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তারা দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস থেকে জাতিকে দূরে সরিয়ে রেখে একটি প্রজন্মকে মৌলবাদী ভাবধারার গড়ে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। পুরোপুরি সফল না হলেও দীর্ঘ সময়ের সুযোগে এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই সফল।
একাত্তরে যারা পাকিস্তানিদের দোসর হয়ে বাঙালির উপর এমন বীভৎসতা চালিয়েছিল তারা পরাজিত হলেও পরাজয়ের পূর্ব মুহূর্তে বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার শত্রুরা এখনো সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে থেকে অদম্য বাংলাদেশকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নতুন প্রজন্মকে ধর্মের অপব্যবহার করে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে।
সন্তানেরা যাতে কোনো দেশবিরোধী চক্রের খপ্পরে না পড়ে, সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তিকে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তাহলেই যে সোনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। সকলকে মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
লেখক : মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন