মীরসরাইয়ে বালু গিলে খাচ্ছে জনপদ, প্রকৃতি

বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ

মীরসরাই প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার মীরসরাই উপজেলার প্রথম জনপদ ধূমঘাট ব্রিজ এলাকা। ফেনী জেলার সর্বশেষ সীমান্ত ফেনী নদী। নদীর ওপারে ফেনী জেলা, এপারে চট্টগ্রাম জেলা। এই মীরসরাই উপজেলায় প্রবেশ করতে প্রথমেই এখন চোখে পড়ে ফেনী নদীর দুপাড়ে শিল পাহাড়ের মতো স্তুপাকার বালুর মহাল। আশেপাশের জনপদ, ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, দোকানপাট, রাস্তাঘাট সবকিছু ছাপিয়ে পাহাড় সমতুল্য বালির ডিবিগুলো যেন গিলে খেয়েছে পুরো ধূমঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা। বালুর মহালের সিন্ডিকেটের অদৃশ্য শক্তির হাতে জিম্মি এ এলাকার সকলে। এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কাছে জিম্মি যেন স্থানীয় প্রশাসনও।

সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলার ৪নং ধূম, ২নং হিঙ্গুলী ও ১নং করেরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় বছরের পর বছর বালু তুলছে একটি সিন্ডিকেট। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখা হতে নামে মাত্র দুটি ঘাট দেখিয়ে অন্তত ১০ ঘাটবিহীন এলাকা থেকে তোলা হচ্ছে বালু। কোথাও কৃষি জমি, কোথাও ঘরবাড়ি রাস্তা পতিত হচ্ছে নদী গর্ভে। কোথাও দিনরাত বালু নেয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। কিন্তু বালুখেকো সিন্ডিকেটের কোনো দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই। তার ওপরে সাম্প্রতিককালে ধূমঘাট এলাকায় মহাসড়ক, ফেনী নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ, আশেপাশের ছোট বড় ঘরবাড়ি, বহুতল ভবন, কৃষি জমি, পুকুর ডোবা, একটি ব্লক ইন্ডাস্ট্রি সবই এই বালুর স্তুপের নিচে। লাগাতার বর্ষণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই ঘটতে পারে যে কোনও বিপর্যয়। কিন্তু বালুর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা অর্থের মোহে এখন কোনও বিষয়েরই ধার ধারছেন না। পরিবেশ বা জনপদের চিত্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, নেই কারো মাথাব্যথা। সম্প্রতি সরেজমিনে এই এলাকা পরিদর্শনে গেলে অনেকে এমন পরিস্থিতির জন্য কোনও মতামতও প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এই বিষয়ে বৃহত্তর বালু মহাল সমিতির সভাপতি হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া সওদাগর বলেন, ফেনী নদী এমনিতেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে, তার ওপর কচুরিপানা এসে ধূমঘাট সড়ক ও রেল ব্রিজের দুপাশেই এমনভাবে বেড়ি করে রেখেছে যে মনে হচ্ছে আমরা বালু না তুললে এই নদী তার নাব্যতা ও গভীরতা হারিয়ে ফেলবে শীঘ্রই। আর আমরা যে পরিমাণ সরকারি রাজস্ব প্রদান করছি সে পরিমাণে ব্যবসাও হচ্ছে না। কোনোভাবে নদী ও ২ হাজার শ্রমিকের বেকার জীবন বাঁচিয়ে রেখেছি আমরা। বালু উত্তোলনের তুলনায় নামে মাত্র ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে বালু মহাল সমিতির ব্যবস্থাপক মহসিন আলী বলেন, আমরা তো মীরসরাই উপজেলার অংশে ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব দিয়ে বালু তুলছি। কিন্তু ফেনীর অংশে ছাগলনাইয়া ও ফেনী এলাকায় রাজস্ব ছাড়াই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

প্রতিবছর একজনই মহালটি ইজারা নিচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম বলেন, আমাদের সিন্ডিকেটে সদস্য ২ শতাধিক ব্যক্তি। সবাই মিলেই ইজারা নেয়। তবুও কেউ যদি আরো বেশি টাকা দিয়ে ইজারা নেয় অথবা সরকার ইজারার মূল্য বাড়াতে পারে এতে আমরাও সহযোগিতা করবো।

এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, এভাবে পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস করে বালু উত্তোলন অবশ্যই বেআইনি। সরকারকে রাজস্ব দিলেও প্রকৃতি কিংবা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে এমন কোনও কাজ করা যাবে না। তবে এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চেয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকেই জোরালো আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, ইতিমধ্যে চলতি সপ্তাহেই কয়েকটি অবৈধ বালু মহালে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরিবেশ প্রকৃতি ঘরবাড়ি দখল করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটালে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্যুতে আদানি পর্বের শুরু
পরবর্তী নিবন্ধআধুনিক শপিং মল উৎসব সুপার মার্কেটের উদ্বোধন