মীরসরাইয়ে পেয়ারা চাষে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ি ও পতিত জমিতে পেয়ারা চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যথাযথ উদ্যোগের অভাবে সেটি (পেয়ারা চাষ) সম্ভব হয়ে উঠছে না। পাশের দুই উপজেলা সীতাকুণ্ড ও ছাগলনাইয়ার থেকে বেশি পতিত জমির পরিমাণ রয়েছে মীরসরাইয়ে। কিন্তু সীতাকুণ্ড ও ছাগলনাইয়া উপজেলা পেয়ারা চাষে এগিয়ে গেলেও মীরসরাই এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। মীরসরাই উপজেলা এলাকায় যেখানে অন্তত ১ হাজার হেক্টর জমিতে সুস্বাধু লাল পেয়ারা চাষ সম্ভব সেখানে চাষ হয়েছে মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে। মূলত উদ্বুদ্ধকরণের অভাবেই বাংলার আপেল খ্যাত সুস্বাধু পেয়ারা চাষে পিছিয়ে রয়েছে মীরসরাইয়। ভোক্তাগণ মনে করেন, মীরসরাইয়ে পেয়ারা চাষ হলে চাষিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি পেয়ারা প্রিয় সাধারণ মানুষের জন্য ও সহজলভ্য হবে এই ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। এতে প্রয়োজন প্রয়োজন কৃষি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ।

জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের লাল পেয়ারা মীরসরাই উপজেলায় এখনো সমাদৃত। কিন্তু এর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে মীরসরাই উপজেলা এলাকায় কমে গেছে বিক্রয়। অল্প পরিমাণে এলেও দাম চড়া। সাধারণ পেয়ারা ৬০ টাকা হলেও সীতাকুণ্ডের পেয়ারা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কেজি বিক্রি হয়। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ কৃষি বিভাগ বলছে, মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ি ও পতিত জমিতেই সম্ভব এই পেয়ারা চাষ। উপজেলার করেরহাট, দুর্গাপুর, ওয়াহেদপুর, খৈয়াছরা, জোরারগঞ্জ, সোনাপাহাড় অঞ্চল পেয়ারা চাষের সবচেয়ে উপযোগী।

মীরসরাই সদরের পেয়ারা চাষি নাছির উদ্দিন ভূঞা বলেন, আমার বাড়ি বড় দারোগারহাট এলাকায়। তবুও মীরসরাই এলে বাড়বকুন্ডের পেয়ারা খুঁজি কিন্তু পাই না। গত সপ্তাহে পেয়েছিলাম তাও দাম অনেক বেশি। এখানকার পতিত জমিগুলোতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলেই এই অঞ্চলেই এই পেয়ারা চাষাবাদ সম্ভব।

মীরসরাই উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, উপজেলায় এবার ৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষাবাদ হয়েছে। তার বেশির ভাগ করেরহাট এলাকায়। সেখানে কয়েক জন পেয়ারা চাষি আছেন। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৮০ টন। তবে এই উপজেলায় কমপক্ষে ১ হাজার হেক্টর পাহাড়ি ও পতিত এলাকায় পেয়ার চাষ সম্ভব। বিশেষ মৌসুমে সীতাকুণ্ডের লাল পেয়ারার জন্যও উপযোগী। তিনি বলেন, এর জন্য বনবিভাগ ও কৃষি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কৃষকদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বিশেষ করে পুষ্টি সমৃদ্ধ, সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যের এই ফল চাষে প্রকৃতই বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। তাই আগামী দিনে আমরা এই বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেবো।

এদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সেখানে এবার ২৭০ জন কৃষক ২৯৩ হেক্টর সমতল ও টিলায় লাল পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের পেয়ারার চাষ করেছেন। পাহাড়ি এলাকায় এখন যেদিকে দুচোখ যাবে সেদিকে সারি সারি সবুজে ঘেরা পেয়ারার বাগান চোখে পড়বে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এ অঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, ভাটিয়ারী, বড়দারোগার হাট ও পৌরসদরের চৌধুরী পাড়াসহ পাহাড়ি অঞ্চলের টিলাগুলোতে পেয়ারার চাষ করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাল পেয়ারার চাষ হয়েছে বাড়বকুণ্ড পাহাড়ি অঞ্চলের টিলাতে। এবার ২৮৭২ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে। সকল কৃষকই লাভবান এবার। পাহাড়ের পাদদেশে পেয়ারা চাষে কোনো রকম সার দিতে হয় না। শুধু একটু পরিচর্যা করতে পারলেই চলে। সব রকম পেয়ারায় ভিটামিন রয়েছে। তবে অন্যান্য পেয়ারা থেকে লাল পেয়ারায় ভিটামিন বেশি এবং খেতেও সুস্বাদু।

অপর পার্শ্ববর্তী উপজেলা ছাগলনাইয়াতে বারোমাসি এ ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় বাগান করতে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে। যা থেকে অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন ফল পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য অন্তত ৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৫ সালের দিকে ফেনীতে কয়েকজন উদ্যোক্তা স্বল্প পরিসরে পেয়ারা আবাদ শুরু করেন। এতে ভালো ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিক আকারে আবাদ বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে জেলায় ১১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। সেখানে ফলন হয় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। পেয়ারার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ফলন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে পেয়ারা আবাদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮০ হেক্টরে। যা থেকে অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন পেয়ারা চাষ হয়েছে। পার্শ্ববর্তী এই দুই এলাকার পেয়ারা চাষেই প্রমাণ করে মীরসরাই উপজেলা অঞ্চলে আরো বেশি সফলতা সম্ভব। শুধুমাত্র সমন্বিত উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএইচসিপি এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির মানববন্ধন
পরবর্তী নিবন্ধসৌরভের ‘বাবা তুমি কোথায়’এলবামের মোড়ক উন্মোচন