মীরসরাই উপজেলা ও দুই পৌরসভা বিএনপির কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা চলছিল গত কয়েকদিন ধরে। সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এরপরও বারৈয়ারহাট এলাকায় পরস্পর দ্বিমুখী সংঘর্ষে মো. জাবেদ (৪৫) নামে লিটন গ্রুপের এক সমর্থক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দু পক্ষের অন্তত ৩০ জন। বুধবার (২৬ মার্চ) বারৈয়ারহাট পৌর এলাকায় উক্ত সংঘর্ষ ঘটে। বৃহস্পতিবার চমেক হাসপাতালে পোস্টমর্টেম শেষে বিকেলে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় তার নামাজে জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহত জাবেদ চট্টগ্রামের বায়োজিদ থানার বাংলাবাজারের নীলগিরি আবাসিক এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে। তিনি একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে মনজুরুল হক সুমন, গোলাম মোর্শেদ, ইলিয়াস হোসেন, বাবুল ও রাশেদ নামে চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের সবাই ধারালো ছুরির আঘাতপ্রাপ্ত বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে মনজু ও সুমনের অবস্থা আশংকাজনক।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বুধবার সকাল ১০টায় বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের পথ অবরুদ্ধ করে হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুর ১২টায় আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল সহকারে বারইয়ারহাট পৌর বাজারে প্রবেশ করলে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন অস্ত্রসহ হামলা চালায়। হামলায় জাবেদ নামে মাঈন উদ্দিন লিটনের সমর্থক নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১৫জন।
তবে পাল্টা অভিযোগ করে বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেনসহ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী ও মাঈন উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। পরে শান্তিরহাট রোডের মুখে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় জাবেদ নামে ওই ব্যক্তি নিহত হন। সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের সুমন, বাবুল, মিজান, নুর উদ্দিন, আরিফসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, সকালে দিদারুল আলম মিয়াজীর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এসময় ১০–১৫ জন আহত হন। হামলার পর দুপুরে তারা আমাদের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাজিয়া আফরিন বলেন, জাবেদ নামের একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার পেটে ছুরির আঘাত রয়েছে। আহত আরও ১০–১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে চমেকে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত দুদিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছে। সকালে দলটির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আরিফ বলেন, আমরা জেনেছি নিহতের পোস্টমর্টেম শেষে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) বিকেলে বায়েজিদ এলাকায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। এরপর পরিবারের লোকজন মামলা করতে আসবে বলে জেনেছি।
এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে বিঘ্ন না ঘটে। সেজন্য বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চত্বর ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করেন। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।