মীরসরাইয়ে নববর্ষের শোভাযাত্রা ঘিরে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৫

আ. লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা ভাঙচুরে আহত ৫

মীরসরাই প্রতিনিধি | বুধবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে মীরসরাইয়ে বিএনপির দুই গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, কয়েক স্থানে নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় ৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলায় আহত হয়েছেন আরো ৫ জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল থেকে মীরসরাই সদর এলাকায় বিএনপির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন (সাদা আমিন) সমর্থিত গ্রুপ এবং উত্তর জেলা বিএনপি নেতা নুরুল আমিন (কালা আমিন) সমর্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে মীরসরাই পৌর সদরের ২ নং ওয়ার্ডের যুবদল কর্মী সাদ্দামের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের হামলাকারীরা।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আউয়াল চৌধুরী বলেন, আমরা বিকাল ৩টায় মিছিল করি। তখন কোনো হামলা বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। পরবর্তীতে কারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, এর মধ্যে আবার আমাদের কর্মী ঠাকুরদিঘিতে খোকন ও চৈতন্যেরহাটে নেজাম সওদাগরের দোকানেও কেউ কেউ হামলা ভাঙচুর করেছে। এ সময় ওরা গুরুতর আহত হয়। সকল বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে অপর পক্ষের নেতা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান সমর্থিত কোনো নেতাকর্মী কোনো পক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেনি। বরং আমরা বৃহৎ আকারের বৈশাখী মিছিল করেছি দেখে ওরা ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নাম ছড়াচ্ছে।

এদিকে মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক কামরুল ইসলামের বাড়িতে হামলায় তার মা হোসনে আরা (৬৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। বাড়ি থেকে লুটপাটের অভিযোগও করেছে তার পরিবার। এছাড়া একই এলাকায় বিএনপি সমর্থিত কয়েকজনের বাড়িতেও হামলায় একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে উক্ত হামলা হয়। হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুল হোসেনের মা রাশেদা আক্তার (৬০), মামা আইনুল কবিরসহ (৪৮) কয়েকটি বাড়ির ৫ জন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু হামলাকারী করেরহাট ইউনিয়নের ভালুকিয়া গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুল হোসেনের ঘরে প্রথমে হামলা করে। এরপর পশ্চিম জোয়ারা গ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন, করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিম, ছত্তরুয়া গ্রামে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাখাওয়াত উল্লাহ রিপনের বাড়িতেও হামলা ভাঙচুর করে। এ সময় শাখাওয়াত উল্লাহ রিপনের ভাড়াটিয়া নাঈমার বাসায় ভাঙচুরসহ লুটপাটের অভিযোগ ওঠে।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া। গ্রামে শুধু পরিবারের লোকজন আর আত্মীয়স্বজন থাকে। তিনি উক্ত হামলায় জড়িতদের আটক করার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চান।

জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, করেরহাট ইউনিয়নে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা শুনে পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবেশ শান্ত হয়। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মীরসরাই সদরের হামলা পাল্টা হামলা বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, বৈশাখী মিছিল ও র‌্যালিকেন্দ্রিক কিছু উত্তেজনা দেখে বড় সংঘাতের আশঙ্কায় পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। তবে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা ও ইসলামাবাদ ১৫ বছর পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক
পরবর্তী নিবন্ধওয়াসার পানি যাচ্ছে প্লট মালিকদের অর্থায়নে