মিশরে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে চুক্তিতে সই করার মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি পাকাপোক্ত হওয়ার ধাপে প্রবেশ করল। গতকাল সোমবার শারম আল শেইখে লোহিত সাগর তীরের রিসোর্টে আয়োজিত এ সম্মেলনে চুক্তিতে সই করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এই চুক্তির মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ মিশর, কাতার ও তুরস্কের সরকারপ্রধান। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শুক্রবার শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির তিন দিনের মাথায় প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এ চুক্তি সই হল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত জিম্মি–বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলের কারাগারগুলো থেকে সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দির সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৮ জন। অন্যদিকে, জীবিত ২০ ইসরায়েলি জিম্মির সবাইকে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে হামাস। সেইসঙ্গে, নিহত চার জিম্মির মরদেহও হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলে সফর করেন। সেখানে তিনি পার্লামেন্টে ভাষণ দেন। এরপর তিনি মিশর সফরে যান। সেখানে গাজা শান্তিচুক্তির জন্য আয়োজন করা শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পেএবং মিশর, কাতার ও তুরস্কের নেতারা গাজা চুক্তির নিশ্চয়তাকারী হিসেবে একটি ঘোষণাপত্র সই করেন। ট্রাম্প ঘোষণাপত্র সইয়ের আগ মুহূর্তে বলেন, ‘নথিগুলো কি আনা যাবে?’ মুহূর্তেই তার সামনে রাখা হয় সবুজ এক ফোল্ডার। ট্রাম্প কলম তুলে সই করেন, তারপর বলেন, ‘এই মুহূর্তে পৌঁছাতে লেগেছে তিন হাজার বছর–বিশ্বাস করতে পারেন? আর এবার এটা টিকেও থাকবে।’ এরপর পর্যায়ক্রমে মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানও একই নথিতে সই করেন। শার্ম আল–শেইখে রিসোর্টে দুই ডজনেরও বেশি বিশ্বের নেতার উপস্থিতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি সারা বিশ্বের জন্য একটি অসাধারণ দিন, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য তো বটেই।’
অপরদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে ২৫০ জন হত্যা, আক্রমণসহ বিভিন্ন অপরাধে ইসরায়েলি আদালত কর্তৃক এক বা একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন, তাদের পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে গাজায় যুদ্ধ চলাকালে আটক ১৭১৮ জন ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ওফার কারাগার থেকে বাসে করে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রামাল্লা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা বাস থেকে নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে জড়ো হওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আনন্দে ফেটে পড়ে।
কারামুক্তরা বাস থেকে নেমে আসার পর তাদের পরিবারের সদস্যরা ও বন্ধুরা তাদের জড়িয়ে ধরেন। বন্দিদের বাবা ও মায়েরা তাদের জড়িয়ে ধরে আনন্দে কেদে ফেলেন। সেখানে থাকা অন্যরা বন্দিদের কাঁধে নিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। মুক্তি পাওয়া বন্দিদের অনেককেই দুর্বল দেখাচ্ছিল আর তাদের কারও কারও শরীরে দৃশ্যমান জখমের চিহ্ন ছিল। গণমাধ্যমে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রামাল্লায় আসার সময় বাসের ভেতরে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা দুই আঙ্গুল তুলে জয়ের চিহ্ন দেখাচ্ছেন ও হাসছেন। এসব বাসের চারপাশে প্রচুর মানুষ ছিল যারা তাদের ফোনে দৃশ্যগুলো ভিভিও করছিল। তাদের অনেকেই হাতেই ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনী রাস্তা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছিল যেন বাসগুলো নিরাপদে গন্তব্যে যেতে পারে।
ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, তাদের সব জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে। কিন্তু হামাস জীবিত ২০ বন্দির সবাইকে সোমবার সকালে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।