মির্জা ফখরুল খামোকা লাফালাফি করছেন

উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এখনো সুযোগ আছে, আসুন, নির্বাচন করুন : স্বপন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ জুলাই, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, মির্জা ফখরুল সাহেব খামোকা লাফালাফি করছেন। নির্বাচনের একটা নিয়ম কানুন আছে। সারা বিশ্বে সেভাবেই হয়। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সে এবং উন্নত দেশে একইভাবে একই নিয়মে নির্বাচন হয়। নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চাই, আমেরিকায় যখন নির্বাচন হয় তখন সেখানে রাষ্ট্রপতি কি পদত্যাগ করেন? ট্রাম্প কি পদত্যাগ করেছিলেন? আমেরিকার আগামী নির্বাচনে বর্তমান রাষ্ট্রপতি বাইডেন কি পদত্যাগ করবেন? তাহলে আমরা কোন দোষ করলাম? পাশের দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি পদত্যাগ করবেন? তিনি তো প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। নির্বাচন কমিশন বিধিবিধান অনুযায়ী থাকবে, নির্বাচন পরিচালনা করবে। গতকাল নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ফখরুল সাহেবরা জেনেও না জানার ভান করে খামোকা লাফালাফি করছেন। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, বেগম জিয়া মাগুরায় একটি নির্বাচন করেছিলেন। সেই নির্বাচনের কথা দেশবাসী জানে। বেগম জিয়া মাগুরায় যে স্টাইলে নির্বাচন করেছিলেন, সেই স্টাইলে নির্বাচন করতে চাইছেন ফখরুল সাহেবরা। ওই নির্বাচন এ দেশে হবে না। এখানে নিয়ম মেনে ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোটে নির্বাচন হবে। ফখরুল সাহেব পদযাত্রা, সমাবেশ করছেন করুক। কারণ তারা অন্য রকমের নির্বাচন চান। যদি জনপ্রিয়তা থাকে বিএনপি নেতারা নির্বাচন করে জয়লাভ করুক। আপনারা তো মানুষের জন্য কাজ করেননি। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আওয়ামী স্বেচ্ছোসেবক লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। করোনা মহামারিতে পৃথিবী যখন থমকে গেছে, দেশ যখন থমকে গেছে, কৃষকরা যখন তাদের ক্ষেতের ফসল কাটতে পারছে না, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সহযোগী সংগঠনসগহ সকল নেতাকর্মী মাথায় করে কৃষকের ধান বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। করোনা মহামারিতে মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ বহুবিধ কাজ স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছে। আজকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যে নতুন কমিটি হবে ওই কমিটি আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পূর্বের ন্যায় তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, আজকে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপি দেশে গণ্ডগোল সৃষ্টি করতে বিভিন্ন স্থানে সভাসমাবেশ করছে। একই সাথে তারা বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে ও সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে আসছে। বাংলার মানুষ এক থাকলে কখনো তারা সফল হবে না। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকতে হবে, ডিজিটালিও সক্রিয় থাকতে হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি স্বীকার করুক আর না করুক, সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। আমরা সরকার গঠন করার পর দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনেও ধস নামানো বিজয়ের মাধ্যমে সারা দেশে জয় লাভ করবে।

এখনো ‘সুযোগ আছে’ মন্তব্য করে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা ভালো আছেন। ২০০১ সালের পর আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেনি। কিন্তু ১৫ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা বহাল তবিয়তে তাদের বাড়িতে ভালো আছেন। ব্যবসাবাণিজ্য করছেন। আজকে একটা পত্রিকায় পড়লাম, মির্জা ফখরুল সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলছেন, সরকার নাকি সকল দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এটি শুধু সত্যের অপলাপ নয়, ডাহা মিথ্যা কথা। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

হুইপ স্বপন বলেন, দরজা বন্ধ করেছে বিএনপি। তারা সারাজীবন পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৭৫এর পর বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তিন পদে একই ব্যক্তি জিয়াউর রহমান। এভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা পাকা করেছেন। সেনাপ্রধান পদে থেকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হয়েছেন। সেনাপ্রধান পদে থেকে কেউ নির্বাচন করতে পারেন না। বিএনপি তাই এমন নতুন আইন চায়, এমন নির্বাচন চায়, যেন তারাই ক্ষমতায় আসবে। এত সুখের দিন আর নেই। বাংলাদেশের সংবিধান সব দরজা খোলা রেখেছে। আপনাদের ৬ জন সংসদ সদস্য ছিলেন। তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার সুযোগ ছিল। দরজা খোলা আছে জেনেই আপনারা তাদের পদত্যাগ করিয়েছেন। দরজা আপনারা বন্ধ করিয়েছেন।

তিনি বলেন, সংবিধানের প্রতি যদি শ্রদ্ধাশীল হন। বাংলাদেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এখনো সুযোগ আছে। টানেলের শেষ প্রান্তে এখনো আলো আছে। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে নামাবেনএই দুঃস্বপ্ন ভুলে যান। আসুন, নির্বাচন করুন। ভোটে মানুষ যদি আপনাদের রায় দেয় তাহলে আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দেব। আর যদি মানুষে আমাদের ভোট দেয় তাহলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।

সকাল ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। দুই পর্বের এই সম্মেলনের প্রথম পর্বে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক এরাদুল হক নিজামী ভূট্টুর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো. নাছির উদ্দিন রিয়াজের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। প্রধান বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আমজাদ খান, . জমির উদ্দিন সিকদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম আজিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, আশিষ কুমার সিংহ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপপ্রতিবন্ধী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ডা. উম্মে সালমা মুনমুন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরী, মো. সাইফুল্লাহ আনসারী ও মো. মাহবুবুর রহমান বাবর, তারেক মাহমুদ চৌধুরী পাপ্পু, জাহাঙ্গীর হোসেন বাবর, আতাউল মাসুদ প্রমুখ।

নোমান আল মাহমুদের কোরআন তেলাওয়াত, দীপক দাশের গীতাপাঠ ও প্রকৌশলী পলাশ বড়ুয়ার ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পাঠ করেন মো. নাছির উদ্দিন রিয়াজ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এস এম সেলিম।

দ্বিতীয় পর্বে সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশন পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। এ সময় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এরাদুল হক নিজামী ভূট্টুকে সভাপতি এবং মো. নাছির উদ্দিন রিয়াজকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তর জেলার দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেলওয়ের জায়গা দখলকারীদের তালিকা ৩০ দিনের মধ্যে দাখিলে হাইকোর্টের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূতদের সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর