মিরপুরে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে আগুন, নিহত ১৬

ছাদের দরজায় তালা, রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়ায় অজ্ঞান, পুড়ে অঙ্গার শ্রমিকরা ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব না : ফায়ার সার্ভিস

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রাথমিকভাবে নিহতদের নামপরিচয় জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। সাড়ে সাত ঘণ্টা পরও নেভানো যায়নি রাসায়নিকের গুদামের আগুন। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তিনজন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।

গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার ওই রাসায়নিকের গুদাম এবং পাশের পোশাক কারখানায় আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সেখানে নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তারা পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও রাসায়নিকের গুদামে সন্ধ্যার পরও আগুন জ্বলছিল। খবর বিডিনিউজের।

এদিকে রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬ জনের মধ্যে ৭ জন নারী, ৯ জন পুরুষ বলে জানিয়েছে বাংলানিউজ। ১৬ জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে জানা যায়, অধিকাংশ লাশ আগুনে পোড়া। ফায়ার সার্ভিস শুরুতে বলেছিল, রাসায়নিকের গুদামের নাম কসমিক ফার্মা। তবে পরে ফায়ার সার্ভিসের বোর্ডে নাম লেখা হয় শাহ আলম কেমিক্যালস। আবার স্থানীয় কয়েকজন বলেছেন, ওই গুদামের নাম আলম ট্রেডার্স। পাশের পোশাক কারখানার নাম কেউ বলেছেন আরমান গার্মেন্টস, কেউ বলেছেন জি এম ফ্যাশনস। সেখানে একাধিক পোশাক কারখানা ছিল কিনা ফায়ার সার্ভিস তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গার্মেন্টস অংশে সার্চিং অপারেশন শেষ হয়েছে। সেখানকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে ১৬টি মৃতদেহ পেয়েছি। মৃতদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। মৃতদেহগুলো এমনভাবে পুড়েছে, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়। আমার মনে হয় ডিএনএ টেস্ট ছাড়া কোনোভাবেই শনাক্ত করা সম্ভব না।

কারখানার কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতটুকু জেনেছি, এটা আলম কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, সবাই বলে। কিন্তু এখন মালিকের কোনো মোবাইল ফোন অথবা মালিকের কোনো কর্মচারী ম্যানেজার কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ এবং আর্মি সবাই চেষ্টা করছে, (কারখানার) কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

ছাদের দরজায় তালা, রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়ায় অজ্ঞান, পুড়ে অঙ্গার শ্রমিকরা : রূপনগর আবাসিক এলাকার মধ্যে রাসায়নিকের গুদামটির অবস্থান। এর ঠিক সামনে পোশাক কারখানা। আশপাশে আরও রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা। গতকাল দুপুরে রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার পর চারদিকে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্রুত আক্রান্ত হন ঠিক পাশের চারতলা পোশাক কারখানার ভবনটির কর্মীরা।

কারখানা দুটির আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কাজের সময় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, পাশের কারখানার আগুন দ্রুত সরু গলির ওপারের পোশাক কারখানার ভবনের নিচে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে পোশাক কারখানার কর্মীরা নিচে নামতে পারেননি। আবার ছাদের দরজায় তালা থাকায় ধোঁয়া থেকে বাঁচতে উপরেও যেতে পারেননি।

উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এ কারণে কর্মস্থলেই বিষাক্ত ধোঁয়ায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন পোশাক কারখানাটির উপর তলায় থাকা কর্মীরা। পরে সেই ভবনের ওপরের দিকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়লে পুড়ে অঙ্গার হতে হয় তাদের।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে পোশাক কারখানায় তল্লাশি অভিযান শেষের তথ্য দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বলেন, চারতলা পোশাক কারখানার উপরে ছাদ টিনের। ছাদে যাওয়ার জন্য সেখানে একটি গ্রিলের দরজা রয়েছে। সেটি তালা মারা ছিল। এ কারণে তারা উপরের দিকে যেতে পারেননি। আপনারা জানেন যে পরিমাণ কেমিক্যাল বিস্ফোরণ, সেটার ফ্ল্যাশওভারে টঙিক গ্যাসের কারণে আকস্মিকভাবে উনারা অজ্ঞান হয়েছেন। পরে তারা সরতে পারেননি। উপরে যেতে পারেননি, নিচেও যেতে পারেননি।

রাসায়নিক গুদামের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, সেখানেও মৃতদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তারা। তিনি বলেন, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামের কোনোটিরই অনুমোদন ছিল না। কোনো ধরনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না। আগুন লাগা এই পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদাম কোনোটারই অনুমোদন ছিল না বলেও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে যে কারখানায় আগুন লেগেছে, তা বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কোনো পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি ওয়াশিং কারখানা। এটির নাম শাহ আলী ওয়াশিং লিমিটেড বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য দিয়েছে সংগঠনটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমজাদ চৌধুরী ও জাহেদ হোসেন চৌধুরীর প্রার্থিতা বৈধ
পরবর্তী নিবন্ধ৩৫ বছর পর আজ চাকসুর ভোট