বকেয়া শূন্যের কোটায় নেওয়া, সিস্টেম লস কমানো ও গ্যাসের ব্যবহার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে প্রিপেইড মিটার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও মিটার ভাড়া নিয়ে নতুন ঝামেলায় পড়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। প্রায় দুই বছর আগে বাস্তবায়িত প্রথম প্রকল্পে ৬০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৬-৭ হাজার গ্রাহকের বকেয়া প্রায় ১ কোটি টাকা মিটার ভাড়া আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস। বকেয়া পরিশোধ করার জন্য নোটিশ জারি করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে।
জানা যায়, ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট নামে ২০১৪ সালে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজনের জন্য ২৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় প্রথম প্রকল্পটি হাতে নেয় কেজিডিসিএল। পরে সংশোধিত আকারে ২২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। এর মধ্যে ১৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ২১ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে জাইকা। এছাড়া সরকারের জিওবি ফান্ড থেকে ৫৯ কোটি ৪৩ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং কেজিডিসিএলের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা অর্থায়ন করা হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজন প্রকল্প শেষ করে কেজিডিসিএল। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয় ১৪৯ কোটি টাকা। প্রথম প্রকল্পে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার অধিক ব্যয় সাশ্রয় হয় কর্ণফুলী গ্যাসের। প্রথম প্রকল্পে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর ব্যয় সাশ্রয়ী প্রমাণিত হওয়ায় গ্রাহকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে প্রিপেইড মিটার। এরপর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই লাখ মিটার স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় কেজিডিসিএল। ৫১৭ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে ১১৭ কোটি টাকা কর্ণফুলী গ্যাস নিজেদের তহবিল থেকে, অবশিষ্ট ৪শ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ সুবিধায় চার বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। বৈদেশিক অর্থায়ন জটিলতার কারণে প্রকল্পটি কিছুদিন ঝুলে থাকে। সম্প্রতি প্রকল্পটিতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেছে কর্ণফুলী গ্যাস।
এর আগে দ্বিতীয় প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ মিটারের জন্য ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট (ইন্সটলেশন অফ প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল পার্ট-থ্রি) নামে তৃতীয় প্রকল্প হাতে নেয় কর্ণফুলী গ্যাস। বর্তমানে সংশোধিত ডিপিপি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে চলতি অর্থবছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাসের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, প্রথম প্রকল্পের আওতায় গ্রাহকদের বাকিতে ৬০ হাজার মিটার সরবরাহ করে কেজিডিসিএল। শর্ত অনুযায়ী সংযোগের পরের মাস থেকে একশ টাকা করে মিটার ভাড়া হিসেবে প্রিপেইড রিচার্জ থেকে কেটে নেবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রি-পেইড মিটার সংযোগের কিছুদিন পর থেকে প্রায় ৬-৭ হাজার মিটার ব্যবহার বন্ধ রাখে গ্রাহকরা। এতে নিয়মিত রিচার্জ না করার ফলে বকেয়া পড়ে যায় মিটার ভাড়া। বর্তমানে এসব বকেয়া আদায়ে পদক্ষেপ নিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের তাগাদাপত্রও দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রভঞ্জন বিশ্বাসকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেজিডিসিএলের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রিপেইড গ্রাহকদের বকেয়া মিটার ভাড়া আদায়ে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বকেয়া পড়া গ্রাহকের সংযোগ পরিদর্শন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সংযোগ থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে না। গ্যাস জ্বলছে না। যে কারণে মিটারে রিচার্জ করার প্রয়োজন হচ্ছে না গ্রাহকদের। মূলত রিচার্জ না করার কারণেই মিটার ভাড়া বকেয়া পড়েছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, কোভিডের কারণে অনেক মানুষ নগরী ছেড়েছে। ভাড়া বাসা আছে, এমন অনেকের বাসায় ভাড়াটিয়া নেই। অনেকের বাসা আছে, কিন্তু বাসায় নিয়মিত থাকেন না। মূলত যেসব গ্রাহকের সংযোগ থাকার পরও গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রেখেছেন তাদের ক্ষেত্রেই মিটার ভাড়া বকেয়া জমেছে। তারা গ্যাসের ব্যবহার শুরু করলে যথানিয়মে মিটার ভাড়া আদায় হয়ে যাবে। পরবর্তী রিচার্জের সময়ে বকেয়া মিটার ভাড়াসহ পরিশোধ করতে হবে গ্রাহকদের। গ্যাসের ব্যবহার না করলেও মিটারের বকেয়া টাকা সরকারি সম্পদ। তাই বকেয়া আদায়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের নোটিশ করা হয়েছে। না হয় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।