রমজান ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ মাসের ফজিলত ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কারণ কোরআন-হাদিসে রমজানকে ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, শাহরু রমজানাল্ লাজি উনজিলা ফী-হিল কোরআন (রমজান হল সেই মাস যে মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে)। সরল অর্থে বলা যায়, কোরআনের কারণে রমজান মাসের মর্যাদা। আবার কোরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে সিয়াম ফরজ। হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর কোরআন নাজিলের কারণেই মর্যাদাবান। আল্লাহ পাক বলেন, জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফী-হি হুদাল্লিল মোত্তাকিন (এটি হল ঐ কিতাব, যে কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই। এটি মুত্তাকিদের হেদায়েত করেন)। কারা মুত্তাকি? মুত্তাকি হল যারা তাকওয়াবান। সে তাকওয়া অর্জিত হয় রোজার দ্বারা। এতে বুঝা যায় যে, কোরআন আর রমজানের মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। তাই রমজান মাসে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত, অন্তরে ধারণ ও কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালনা করা এবং জ্ঞানের জন্য কোরআন গবেষণা করা মুসলমানদের জন্য একান্ত জরুরি।
কারণ রমজান মাসে নাজিলকৃত কোরআনের প্রথম বাণী- ‘পড়’। যে পাঁচটি কোরাআনের আয়াত এক সাথে প্রথম নাজিল হয় তা ফতোয়া, ইতিহাস বা অন্য কোনো বিধি-বিধান নয়, তা হল জ্ঞান-বিজ্ঞানের। রমজানের শিক্ষা হল- পড়, জ্ঞান আহরণ কর, অজানাকে জান, সৃষ্টি ও স্রষ্টার রহস্য আত্মস্থ কর। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমৃদ্ধি দ্বারা নৈতিকতা বিকশিত কর এবং বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কর। এটি রমজানের শিক্ষা। রমজান মাসকে কোরআন চর্চার মাস হিসেবে ইসলামী গবেষকগণ মত ব্যক্ত করেছেন।
রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে হযরত জিবরাইলকে (আ.) পূর্ণ কোরআন একবার শুনাতেন এবং জিবরাইল (আ.)ও রাসুলকে (সা.) পূর্ণ কোরআন একবার শোনাতেন। তাঁর জীবনের শেষ রমজানে তিনি জিবরাইলকে (আ.) দুইবার পূর্ণ কোরআন শোনান এবং জিবরাইল (আ.)ও দুইবার পূর্ণ কোরআন শোনান। এতে বোঝা যায়, রমজান শুধু পবিত্র কোরআন অবতীর্ণের মাস নয়, কোরআন শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ-পাঠ অনুশীলনের মাসও। কোরআন হল আল্লাহর বাণী। কোরআন তেলাওয়াত মানে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা প্রার্থনা করবে, হে আমার প্রভু! আমি আহার এবং কুপ্রবৃত্তিগুলো হতে তাকে দিনে বিরত রেখেছি। আমার সুপারিশ তার পক্ষে গ্রহণ কর। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুমাতে দিইনি, আমার সুপারিশ তার পক্ষে গ্রহণ কর। মহান আল্লাহ পাক উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করবেন। (সূত্র : মুসনদে ঈমাম আহমদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৫৮৬, হাদিস নং-৬৬৩৭)।












