মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

আজ দিবাগত রাতে লাইলাতুল কদর। এ রাত অত্যন্ত বরকতময়। এ রাতে সারা বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতে মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, তার সারাজীবনের গুনাহ মার্জনা করে দেওয়া হবে। (বোখারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৬০)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আমি সেটাকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। আপনি জানেন কদরের রাত কী? কদরের রাত হলো হাজার মাসের অপেক্ষা উত্তম। এতে ফেরেস্তা ও জিবরাইল অবতীর্ণ হয় আপন রবের নির্দেশে।

শান্তি, সেই রজনী উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা : কদর, পারা-৩০)। হাজার মাসের চেয়ে কদরের রাত উত্তম। অর্থাৎ ৮৩ বছর চার মাসের চেয়েও উত্তম। এখানে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম মানে কতটুকু উত্তম তার সীমানা আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দেননি। স্রষ্টার দৃষ্টিতে অনির্ধারিত সীমা সৃষ্টির কেউ পরিমাপ করতে পারবে না। অর্থাৎ রাতটি অসীম ধারণার বাইরে ফজিলতপূর্ণ।এখানে হাজার মাস শব্দদ্বয় রূপক অর্থে এসেছে।

কারণ আরবে কোনো কিছুর চূড়ান্ত পরিসীমা বুঝাতে ‘আলফুন’ বা হাজার শব্দটি ব্যবহার করা হতো। হাজার মাস দ্বারা পুরো জীবন বা অনন্তকাল বুঝানো হয়। যেমন পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, তারা প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার বছর আয়ু পায়। (সূরা বাকারা, আয়াত : ৯৬)। এখানে হাজার বছর অর্থ দীর্ঘায়ু ও অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা বুঝানো হয়েছে। এই রাতটিকে মর্যাদাবান করতে (কদর শব্দের এক অর্থ মর্যাদা) আল্লাহপাক পুরো একটি সুরা নাজিল করেছেন। এই সূরায় আল্লাহপাক প্রশ্ন করেছেন, আপনি জানেন কী! লাইলাতুল কদর কী? অর্থাৎ আপনার জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।

এ রাত কত গুরুত্বপূর্ণ তা জানা সহজ নয়, এ কথাটি কোরআনে ইশারা করেছেন। আমাদের জন্য কদরের রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। অথচ আমরা এ রাতের মর্যাদা আত্মস্থ করতে পারি না। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) ইরশাদ করেছেন, লাইলাতুল কদর একমাত্র আমার উম্মতের জন্য দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো নবীর উম্মতের জন্য কদর ছিল না। (মুসলিম শরীফ)।

মুফাসসিরগণ সূরা কদরের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, মহানবী (দ.) ইন্তেকালের পর হযরত জিবরাইল (আ.) দুনিয়াতে আগমন করা বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু বছরে একবার কদরের রাতে আল্লাহর নির্দেশে দুনিয়াতে আগমন করেন। হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর পূর্ববর্তী নবীগণের উম্মতের দীর্ঘায়ু এবং নিজ উম্মতের স্বল্পায়ুর কথা ভেবে চিন্তিত হলেন। কারণ সময়ের স্বল্পতার কারণে ইবাদতে তাঁর উম্মত পূর্ববর্তী নবীর উম্মতের সমান হতে পারবে না। তখন আল্লাহপাকের রহমতের ঢেউ উদিত হলো। তখন আমাদের নবীর উম্মতের জন্য মহা সুসংবাদের বার্তা হিসেবে সূরা কদর নাজিল করেন। (তাফসিরে আজিজি, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৩৪)। লাইলাতুল কদর সাধারণ কোনো রাত নয়, এটি মানবজাতির জন্য সেরা নেয়ামত প্রাপ্তির রাত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র লাইলাতুল কদর আজ
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু