মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | শুক্রবার , ২২ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ রমজান। ইতিকাফ করার দিন। মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়। ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ধর্না’ দেয়া। ইতিকাফকারী বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে ধর্না দিয়ে পড়ে থাকেন। বিবেকবান মুসলমান বালেগ-নাবালেগ উভয়ই ইতিকাফ করতে পারবে। কিন্তু ইতিকাফকারীর গোসল ফরজ হওয়ার মত নাপাকি এবং মহিলা হলে হায়েজ নিফাস হতে পবিত্র হওয়া পূর্বশর্ত। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২১১)। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত রহমতে পরিপূর্ণ। এ মাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সময় লাইলাতুল কদর। সে কদর পাওয়ার জন্য রাসুল (সা.) রমজানে ইতিকাফ করতেন। বিশেষ একটি কারণে এক রমজানে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি। সে বছর শাওয়াল মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (সহীহ বোখারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৬৭১)। একবার সফরে থাকার কারণে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি তাই পরবর্তী রমজানের বিশদিন তিনি ইতিকাফ করেন। (জামে তিরমিজি, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২১২)। একবার রাসুল (সা.) তুর্কী তাবুর মধ্যে রমজানের প্রথম দশদিন ইতিকাফ করলেন। তারপর মধ্যবর্তী দশদিন ইতিকাফ করলেন।
অতঃপর তিনি ইরশাদ করেছেন, আমি রমজানের প্রথম দশদিন এবং মধ্য দশদিন কদর খোঁজার জন্য ইতিকাফ করি। তখন মহান আল্লাহ পাক আমাকে সংবাদ দিলেন, লাইলাতুল কদর শেষ দশদিনের মধ্যে রয়েছে। যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করে। দেখুন! মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফকে কিভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতটি প্রত্যেক রমজানে সবার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়, তাই জীবনে একবার হলেও ইতিকাফ পালন করা উচিত। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হল শবে কদর খোঁজা। আর এই শবে কদর রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে রয়েছে। তাই রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করে লাইলাতুল কদর অর্জন করতে হয়। মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মোয়াক্কাদায়ে আলাল কেফায়া। অর্থাৎ এটি এমন সুন্নত যে সুন্নত এলাকার পক্ষ হতে কেউ আদায় না করলে এলাকাবাসী সবাই গুনাহগার হবে। আর যে কেউ আদায় করলে গুনাহ হতে মুক্তি পাবে। হযরত আতা খোরাসানী (রহ.) বলেছেন, ইতিকাফকারী হলো ওই ব্যক্তির মতো যে আল্লাহর দরবারে এসে বসে পড়ে এবং বলেন, হে আল্লাহ! যতক্ষণ আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন না ততক্ষণ আমি আপনার দরবার হতে ফিরে যাব না। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৪২৬)। উম্মুল মোমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (র.) হতে বর্ণিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে সওয়াবের উদ্দেশ্য ইতিকাফ পালন করে আল্লাহপাক তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (জামেউস ছগীর, পৃষ্ঠা-৫১৬)। হযরত মাওলা আলী (র.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইতিকাফ করলো সে দুই হজ ও দুই ওমরাহর পূণ্য অর্জন করলো। সুবহানাল্লাহ। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৪২৫)।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারখানায় গ্যাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধচসিকে আয়বর্ধক প্রকল্প চান মেয়র