মাহবুব-উল আলম : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

| সোমবার , ৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

মাহবুবউল আলম(১৮৯৮১৯৮১)। কথাসাহিত্যিক, গবেষক, সাংবাদিক। কবিতা লিখে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করলেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেন কথাসাহিত্যিক ও গবেষক হিসাবে। তিনি চট্টগ্রামের ফাতেহপুর গ্রামে ১ মে ১৮৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী নাসির উদ্দিন, মাতা আজিমুন্নেসা বেগম। মাহবুবউল আলম ১৯১৬ সালে ফতেয়াবাদ এম.ই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। চট্টগ্রাম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন মাহবুব উল আলম। তিনি মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমানে ইরাক) প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন, পরে ১৯২০ সালে পল্টন ভেঙ্গে গেলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯২০ সালে তিনি সাবরেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। এ সময় তিনি পল্টন জীবনের স্মৃতি গ্রন্থটি লিখেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ডিস্ট্রিক্ট সাবরেজিস্ট্রার, ১৯৫২ সালে ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার এবং একই বছর জুন মাসে ইন্সপেক্টর অব রেজিস্ট্রেশন পদে উন্নীত হন। দু’বছর পর ১৯৫৪ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে মাহবুবউল আলম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৩৫ সালে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় তার ‘পল্টনজীবনের স্মৃতি’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেন। ১৯৪০ সালে ‘পল্টন জীবনের স্মৃতি’ ধারাবাহিক লেখাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মোমেনের জবানবন্দী’ (১৯৪৬)। অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্ত্রী শ্রীমতি লীলা রায় উপন্যাসটি ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেন। এই বইটি তৎকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পাকিস্তানের পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৪ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তার সম্পাদনায় চট্টগ্রাম থেকে সাপ্তাহিক ‘জমানা’ প্রকাশিত হয়, যা পরে দৈনিক পত্রিকা হিসাবে প্রকাশিত হতো। এটি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: স্মৃতিকথা ‘বর্মার হাঙ্গামা’ (১৯৪০), ‘মোমেনের জবানবন্দী’ (১৯৪৬), গল্পগ্রন্থ: ‘তাজিয়া’ (১৯৪৬), ‘পঞ্চ অন’্ন (১৯৫৩), উপন্যাস: ‘মফিজন’ (১৯৪৬), রসরচনা: ‘গোফসন্দেশ’ (১৯৫৩), ‘ইন্দোনেশিয়া’ (১৯৫৯), ‘তুর্কী’ (১৯৬০), ‘সৌদী আরব’ (১৯৬০)। তার মৃত্যুর পর আরো চারটি মজাদার হাস্যরসাত্মক গল্প প্রকাশ করা হয়। রঙবেরঙ (১৯৯৮), পল্টনে (১৯৯৮), প্রধান অতিথি ও তাজা শিঙ্গি মাছের ঝোল (২০০২) এবং সাত সতেরো। সাহিত্যক মাহবুবউল আলম তাঁর কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি, সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪), প্রধানমন্ত্রী সম্মাননা পদক (১৯৬৫), একুশে পদক (১৯৭৮) লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধশ্রাবণের সুখ