করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে বাড়ির বাইরে সর্বত্র মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। করোনা রোগীর সংখ্যা ও এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ। আর মোট মৃত্যু আট হাজার ৫৭১ জন। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৭৩ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৮ জনে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ১৩ মার্চ সবার মাস্ক পরা নিশ্চিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সমপ্রতি করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সংক্রমণের হার রোধের জন্য সর্বক্ষেত্রে সবার মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই অবস্থায় সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। গতকাল সরকারি তথ্য বিবরণীতে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে সরকারের কিছু নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো : (১) সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসে আগত সেবা গ্রহীতারা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। (২) সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আগত সেবা গ্রহীতা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। (৩) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। (৪) শপিংমল, বিপণিবিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। (৫) হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক পরা ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবেন না। স্থানীয় প্রশাসন ও হাট-বাজার কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। (৬) গণপরিবহনের (সড়ক, নৌ, রেল, আকাশপথ) চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে আরোহণের আগে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মালিক সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। (৭) গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সব শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মালিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। (৮) হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সব পথচারীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবেন। (৯) হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কর্মরত ব্যক্তি ও জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরবেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতি নিশ্চিত করবেন। (১০) সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান নিশ্চিত করবেন। (১১) বাড়িতে করোনা উপসর্গসহ কোনো রোগী থাকলে পরিবারের সুস্থ সদস্যরা মাস্ক ব্যবহার করবেন।
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ফের জরিমানার নিয়ম : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আগের মত কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে; মাস্ক না পরলে-স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, আমাদের সিদ্ধান্ত যেগুলো ছিল, সেগুলো যেন প্রয়োগ করে। অর্থাৎ মোবাইল কোর্ট করে। যারা মাস্ক না পরে তাদেরকে জরিমানা করবে। নো মাস্ক-নো সার্ভিস কর্মসূচিকে আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গেস্ট কন্ট্রোল করবে। এছাড়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত রিভিউ করতে পারে। সংক্রমণ যদি বেড়ে যায়, তাহলে নিশ্চয় তারা হয়তো এটাকে রিভিউ করবেন। আর যদি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে হয়ত তারা তাদের মত করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম আগের দিন বলেছেন, এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ, আক্রান্তদের অনেককেই আইসিইউতে ভর্তি করা লাগছে। এখন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।