মাসের পর মাস অনুপস্থিত চার শিক্ষক, তবুও ভাতা তোলেন

বান্দরবানের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

বান্দরবান প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৪ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানর আলীকদম উপজেলায় লাওলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছরে এই চার শিক্ষকের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ছিল মাত্র দশ দিন। ছুটি ছাড়াই তারা মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আলীকদম উপজেলা সদর থেকে কুরুকপাতা দুর্গম ইউনিয়নের ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাওলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকাল থেকে দুর্গমাঞ্চলের বিভিন্ন পাড়ার শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিত হয়ে মাঠে এবং ক্লাস রুমের বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী তিন শিক্ষককে খোঁজে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেনলাওলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংহ্লাথুই মারমা, সহকারী শিক্ষক সাজেদা খাতুন, উঞোচিং চাক এবং তানভীর হাসান সজীব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলীকদমে কুরুকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার লাওলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ২০১০ সালে। ২০১৭ সালে জাতীয় করণে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১ জন প্রধান শিক্ষক ও ৩ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু চারজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের উপস্থিত থাকেন না মাসের পর মাস। বছরের মাত্র কয়েকদিন বিদ্যালয়ে যান।

বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে মাসে দুই হাজার বেতনে ভাড়াটিয়া হিসেবে রাখা হয়েছে স্থানীয় এক শিক্ষককে। কিন্তু সরকারি শিক্ষকরা মাসের পর মাস নিয়মিত বেতন তুলে নিলেও বিদ্যালয় অনুপস্থিত থাকেন বছরের পর বছর। শুধুমাত্র সরকারি এই বিদ্যালয় নয়, পাহাড়ের এমন আরও বহু বিদ্যালয়ের চিত্রও একিরকম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কয়েকমাসে মাত্র দুই থেকে তিনদিন চেহারা দেখাতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য অনুরোধ করা হলেও শিক্ষকরা অভিভাবকদের কথার পাত্তাই দেন না। শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা এবং শিক্ষা বিভাগের তদারকি না থাকায় পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অভিযোগ করে লাওলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সহসভাপতি চংঅং ম্রো বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত স্বুলে উপস্থিত থাকেন না। দুই একদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয় না। পাঠদান না করেই ঘুরাফেরা করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ফিরে যান বাড়িতে। সরকারী শিক্ষকরা মিলে গ্রামের স্থানীয় এক যুবককে বর্গা শিক্ষককে হিসেবে ২ হাজার টাকা সম্মানি দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালু রেখেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লাওলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মং হ্লাথুই মারমা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার পর কেউই ভালো চোখে দেখেন না। শিক্ষকদের পেছনে লেগে রয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান করালেও মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।

কুরুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাংপুং ম্রো বলেন, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। মাঝে মধ্যে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে যান, কিন্তু ক্লাস নেয় না। এমন অবস্থা চলমান থাকলে দুর্গম এলাকাগুলো প্রাথমিক শিক্ষার মান আরও কমে যাবে। তদারকি না থাকায় বিদ্যালয়ে এই দুর্দশা।

এ প্রসঙ্গে বান্দরবানের জেলা শিক্ষা প্রাথমিক কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হবে। তদন্তে সত্যতা মিললে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোটা নিয়ে এখনও আন্দোলন উসকানিতে : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধমনা হত্যার ৪ আসামির ভারতে পালানোর চেষ্টা