মালয়েশিয়ায় যে কোনো সময় শ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া

অবৈধপথে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা জরুরি

| শনিবার , ২৪ মে, ২০২৫ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

গণমাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আনন্দ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া যেকোনো সময় শ্রমিক নেবে। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণসহ শ্রমবাজার সম্পর্কিত তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা গত বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সভা ইতিমধ্যে সফল হয়েছে। যেকোনো সময় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া আগামী ছয় বছরে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম ধাপে গত বছর শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার কারণে সব প্রক্রিয়া শেষ করেও যেতে না পারাদের প্রায় ৮ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যাবেন। তাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের মাধ্যমে পাঠানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে অধিক সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি থাকলেও মালয়েশিয়া সরকার সীমিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নিতে আগ্রহী। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় আলোচনা চলছে। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেওয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার ইতিমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে। মালয়েশিয়া সরকার খুবই আন্তরিকভাবে দেখছে কর্মী নেওয়ার বিষয়টি। দুপক্ষই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চায়।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ পন্থায় শ্রমিক গেলে তাদের মালয়েশিয়ার বনেজঙ্গলে পালিয়ে বেড়াতে হয়। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। মামলা হয়, কারাভোগ করেন। তাই অবৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক না নিয়ে বৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে দেখছে। শ্রমিক গ্রহণকারী দেশ হিসেবে মালয়েশিয়া সরকার যেসব শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার সেসব শর্ত প্রতিপালনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বর্ধিত বেকারত্ব অনেকাংশে লাঘব হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম জনশক্তি রপ্তানি দেশ। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয় অর্জনকারী ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম। একটি দেশের অদক্ষ, অশিক্ষিত, বেকার ও কর্মক্ষম বিহীন জনগণকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে বহির্বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রেরণ করা লোকেরা হলো দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি সৃজন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা সংবিধিবদ্ধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুসম্পন্ন করা হয়। যেকোনো দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি এবং দক্ষ জনশক্তিই পারে রাষ্ট্রের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে সচল রাখতে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা উপভোগ করছে, কেননা বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জনশক্তি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম তরুণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা উপভোগ করছে। তাই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি রপ্তানির আশা প্রকাশ করেন তাঁরা। বাংলাদেশমালয়েশিয়া সুদীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম, বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি, ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারসহ নানা বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা আশাবাদী।

রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী পত্রিকান্তরে বলেছেন, ‘কর্মীদের নিরাপদ কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা ও কম খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। আমোদের রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের কে ব্যবসা করল, কে করল না সেটাকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের স্বার্থ ও শ্রমিকের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’ এ কথা সত্যি যে, অবৈভাবে শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেলে দেশটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নিতে অনীহা প্রকাশ করে। অন্যদিকে মালয়েশিয়াও আন্তর্জাতিকভাবে ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে। তাদের পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। তাই অবৈধপথে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিহারীলাল চক্রবর্তী : বাংলা সাহিত্যের ভোরের পাখি