যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামের কর ও ব্যয়ের মেগা বিল কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) পাস হয়েছে। এই বিলটি এখন সিনেটে পাস হতে হবে। এই বিলে বিভিন্ন প্রস্তাবের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যান্য দেশে অর্থ পাঠানোর (রেমিটেন্স) ওপর কর বসানোর প্রস্তাব। গতকাল বৃহস্পতিবার হাউজে ২১৫–২১৪ ভোটে বিলটি পাস হয়। এর আগে বুধবার হাউজ কমিটিতে অল্প ব্যবধানে বিলটি পাস হয়েছিল। এরপরই বিলটি নিয়ে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে এই ভোট হল। খবর বিডিনিউজের। হাউজ স্পিকার মাইক জনসন এই বিলকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক মোড় পরিবর্তন’ আখ্যা দিয়েছেন। যদিও বিলটির সামনে এখনও আছে বড় চ্যালেঞ্জ এবং সেনেটে পাস হওয়ার খাঁড়া। রিপাবলিকান নেতারা বিলটি নিয়ে নিবিড় আলোচনায় নিয়োজিত থাকার সময়ই ট্রাম্প এ বিল সামনে এগুনোর পথ সুগম করার চেষ্টা নিয়ে এগিয়ে আসতে হাউজের রিপাবলিকানদের কাছে আবেগঘন আবেদন জানিয়েছিলেন। বিলটির বিপক্ষে ২১২ ডেমোক্রেটের সঙ্গে ভোট দিয়েছেন দুই রিপাবলিকানও। বিলটি এখন সিনেটে যাওয়ার পরও চলবে কাঁটাছেড়া। কয়েকজন রিপাবলিকান এরই মধ্যে বলেছেন তারা এই বিলে কিছু পরিবর্তন চান। ফলে বিলটির ভাগ্য ঝুলে আছে সিনেটে কি হয় তার ওপর। ট্রাম্প বলছেন, এই বিল আইনে পরিণত হলে তা দেশের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে আনবে। কর অনেক কমবে এবং সামরিক ও সীমান্ত খাতে ব্যয় বাড়বে। যেসব রিপাবলিকান বিভিন্ন কর্মসূচিতে কর হ্রাস চান এবং যারা সরকারি ব্যয় অনেক বেশি কাটছাঁট চান তাদের সবাইকেই এই বিলের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা নিয়েছেন ট্রাম্প ও তার কংগ্রেসের সহযোগীরা। কিন্তু ব্যয় কতটা কমানো হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের বোঝা কমানোর জন্য যারা চাপ দিয়ে আসছেন, তাদের জন্য ‘দ্য কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস’ (সিবিও) এর হিসাব বলছে, নতুন বিল পাস কলে আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণে যোগ হবে প্রায় ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ওদিকে, সরকারের ব্যয় কমানোর দিক থেকে এই বিলে দুটো বড় ধরনের জাতীয় কর্মসূচি মেডিকেইড এবং ফুড স্ট্যাম্পে খরচ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
নিম্নআয়ের আমেরিকানদের এই মেডিকেইড চিকিৎসা সুবিধায় কাটছাঁটের বিষয়টি নতুন বিলে সবচেয়ে কন্টকাকীর্ণ বিষয় হয়ে আছে। অনেক রিপাবলিকানই মেডিকেইডে খরচ কমানোর পক্ষে আবার অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। মেডিকেইডে খরচ কমানোর বিরুদ্ধে থাকা রিপাবলিকানরা বলছেন, এতে নিম্ন আয়ের লাখো মার্কিনি সমস্যায় পড়বে। বিলটিতে আরও আছে রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে কর হ্রাসের প্রস্তাব। ডেমোক্র্যাট অধুষ্যিত বিভিন্ন রাজ্যে যেসব ধনী এলাকায় উচ্চ হারে কর দিতে হয় সেখানকার রিপাবলিকানরা নতুন বিলের মাধ্যমে কর অনেকটাই কমানোর পক্ষে রয়েছেন।
ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সির মেয়াদে করপোরেট এবং ব্যক্তির ওপর কর হ্রাসের যে বিল পাস করেছিলেন, সেটিই আরও বড় পরিসরে কার্যকর করার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে ১১১৬ পাতার নতুন ‘বিগ বিউটিফুল’ বিলে। তাছাড়া, এই বিলে অভ্যন্তরীন রাজস্ব বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যান্য দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে (রেমিটেন্স) ৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাবও করা হয়েছে। এর আওতায় পড়বেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন অথচ কাজ বা ব্যবসা সূত্রে সেদেশে থাকেন, তারাসহ এইচ–১বি ভিসা, এফ–১ ভিসাধারী এমনকি গ্রিনকার্ডধারীরাও।
বিলটি আইনে পরিণত হলে বিপদে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা লাখ লাখ ভারত, বাংলাদেশসহ আরও একাধিক দেশের নাগরিকরা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিরা যারা নিয়মিত দেশে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন– পরিবারের ব্যয় মেটাতে বা বিনিয়োগের জন্য তারা আগের মতো পুরো অর্থ পৌঁছে দিতে চাইলে তখন খরচ করতে হবে বাড়তি ডলার।
ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য, প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ উপার্জন করে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাঠানোর কারণে দেশ থেকে অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। এই প্রবাহ বন্ধ করে দেশের রাজস্ব বাড়াতে রেমিটেন্সে কর বসানো দরকার। এতে অভিবাসন ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে দাবি ট্রাম্পপন্থিদের।