মো. নাজির আকন এবং মো. মাসউদুর রহমান ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিলেন। এর সুবাদে দুই পক্ষের মধ্যে আর্থিক লেনলেন হয়। একপর্যায়ে সৃষ্টি হয় বিরোধ। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে এবং মামলায় যাওয়ার আগে মো. নাজির বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিগ্যাল এইড অফিসে আবেদন করেন। আবেদনটি গ্রহণ করে দুই পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে সালিশি বৈঠকের (মীমাংসা সভা) মাধ্যমে বিরোধটি মীমাংসা করা হয়। মো. নাজির আকনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় বিরোধীয় অর্থ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে এই বিরোধ মীমাংসা করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) শাহনেওয়াজ মনির। অফিস এসিসট্যান্ট মো. এরশাদুল ইসলাম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নাজির আকন ফিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার আতরখালী এলাকার আব্দুল সোবহান আকনের ছেলে। নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ ডেবার পাড় এলাকায় বর্তমানে বসবাস করছেন। অন্যদিকে মো. মাসউদুর রহমান ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার ফিরোজপুরের কাউখালীর চিরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তারা নগরীর বায়েজিদ থানাধীন ওয়াজেদীয়া কামিল মাদ্রাসা এলাকায় থাকেন।
অফিস এসিসট্যান্ট মো. এরশাদুল ইসলাম বলেন, বিরোধ হলে শুধু মামলা নয়, লিগ্যাল এইড অফিসে আপসও হয়। এটি আমাদের স্লোগান। এরই ধারাবাহিকতায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী মো. নাজির আকন এবং মো. মাসউদুর রহমান ও তার স্ত্রী কামরুন নাহারের মধ্যে থাকা আর্থিক বিষয়ের বিরোধ মীমাংসা করা হয়েছে। মো. নাজির আকনের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর দুই পক্ষকে নোটিশ দিয়ে ডেকে নেয়া হয়।
গত বছরের ২২ নভেম্বর মো. নাজির আকন আবেদনটি করেন জানিয়ে মো. এরশাদুল ইসলাম বলেন, মো. মাসউদুর রহমানের কাছে মো. নাজির আকনের মোট পাওনা ছিল ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পূর্বে পরিশোধ করা হয়। অবশিষ্ট ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে আজ (গতকাল) নগদ ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৩ লাখ আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এবং বাকি টাকা আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিশোধ করার অঙ্গীকার করা হয়।
লিগ্যাল এইড সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মামলায় যাওয়ার আগে (ফ্রি কেইস) সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আবেদন জমা পড়ে ১৮৮টি। আগের বছরের জের ছিল ২০৮টি। এর মধ্যে বিরোধীয় পক্ষকে হাজির করার মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে ২১টি। মীমাংসার জন্য নথিজাত (মামলা করার জন্য আইনগত সহায়তা প্রদান) করা হয়েছে ১৪০টি। চলমান রয়েছে ২৩৫টি আবেদন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট ৫২ জন আবেদনকারী মামলায় যাওয়ার আগে উপকারভোগ করেছেন। এর মধ্যে ২০ জন নারী, ২২ জন পুরুষ ও ১০ শিশু।
সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে মামলায় যাওয়ার আগে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ৮১৮টি আবেদন জমা পড়ে। আগের বছরের জের ছিল ১৯০টি। এর মধ্যে মীমাংসা করা হয়েছে ১৬০টি। মীমাংসার জন্য নথিজাত করা হয় ৬৪০টি আবেদন। চলমান ছিল ২০৮টি আবেদন। ওই বছরের উপকারভোগীদের মধ্যে ছিলেন ১৮০ জন নারী, ১৮৮ জন পুরুষ ও ১৩০ জন শিশু।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা করে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং গত বছর ৭৫ লাখ ১১ হাজার টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে বুঝিয়ে দেওযা হয়।