মানুষের জীবন-জীবিকায় স্বস্তি ফেরাতে হবে

| বুধবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর উপলক্ষে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর সময়কালে সরকারের কিছু পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো গেছে। তবে এখনো মানুষের জীবনজীবিকায় স্বস্তি আসেনি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচিতে ব্যাপক দুর্বলতা ছিল। কেউ কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা কম। কারণ, তাদের মূলকাজ গণতান্ত্রিক উত্তরণ। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) . এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ বছরে বাংলাদেশের সব খাতের কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যারা এই কাঠামো ভেঙে দিয়েছে, তাদের বিচার হবে তো? রাজনীতিতে স্বার্থের সংঘাত থাকলে সব পরিকল্পনা হোঁচট খাবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে সবাই এতই হতাশ? হ্যাঁ, হতাশ হওয়ারই কথা। তবে আমরা কখনো বলিনি সবার বাড়িতে গোলাপ ফুল ফুটবে। বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা অকল্পনীয়। এ ধরনের বিপ্লব পৃথিবীর কোথাও দেখা যায়নি। নেতাহীন আন্দোলন। তিনি আরও বলেন, এখনো পুলিশের কাঠামো তৈরি হয়নি। পুলিশের সংস্কার খুবই জরুরি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে তা না হলে অতীতে যেভাবে ছাত্রলীগের ছেলেরা পুলিশে ঢুকেছে, ভবিষ্যতেও যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের রাজনৈতিক কর্মীরাই পুলিশে যোগ দেবে। তিনি বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপটি পুরোপরি বিপর্যস্ত (কলাপস)। তাদের রয়েছে ৩৮ হাজার শ্রমিক। বিপুল অঙ্কের এই শ্রমিক প্রতিদিন অন্য শ্রমিকদের ডিস্টার্ব করে। আন্দোলন, ভাঙচুর, ঘেরাও অব্যাহত রয়েছে। কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই কোম্পানি। এর মধ্যে শুধু একটা ব্যাংক অর্থাৎ জনতা ব্যাংক থেকেই ২৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। এর বিপরীতে কোনো জামানত নেই। শ্রম ও নৌউপদেষ্টা বলেন, আগের সরকার পুরো কাঠামো ভেঙে ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, এমনকি সেনাবাহিনীও। প্রতিটি জায়গায় ফ্যাসিবাদ ঢুকে পড়েছিল। রাষ্ট্রের কোথাও ফাঁকা জায়গা ছিল না।

সেমিনারে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও সংস্কারের ফলে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ সময়ে সরকার বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাত সংস্কার অন্যতম উদ্যোগ। এর ফলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটা ভালো অবস্থায় গেছে, পতন ঠেকানো গেছে। তবে এক বছর কম সময় হলেও এর মধ্যে জীবন ও জীবিকায় ‘স্বস্তি’ না আসার সমালোচনা করেন তিনি। এর সমাধান হিসাবে ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহ চালু রাখার পরামর্শ দেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে রয়েছে, বিনিয়োগ আসছে না, কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না। সুতরাং এই বিষয়গুলো ৬ মাস ও নতুন সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চমূল্যস্ফীতি রয়েছে, এ কারণে দরিদ্র মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য যেসব কর্মসূচি আছে, তা চলমান রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার কাজও চলমান থাকবে, কারণ এখনো মূল্যস্ফীতি যথেষ্ট উপরে।

বিনিয়োগে স্থবিরতা এসেছে জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নতুন করে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো প্রস্তুত করলে আগামী দিনে যারা সরকারে আসবে, তখন বিনিয়োগকারীরা যেন সহজেই বিনিয়োগ করতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনের শাসন, আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বাছবিচারহীন গ্রেপ্তার, মব সন্ত্রাস ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, নারীর প্রতি সহিংসতায় জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এই সংকট নিরসনে রাষ্ট্রকে এখনই কার্যকর, দায়িত্বশীল ও মানবাধিকারবান্ধব ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে জনগণের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত পরিবর্তনের স্বপ্ন ব্যর্থ না হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে