মানুষকে যুক্তিবাদী ও ধৈর্যশীল হতে শেখায় বিতর্ক

দৃষ্টি ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, তবে সে স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে নয়, জেগে। সেই স্বপ্ন যা আমাদের ঘুমাতে দেবে না। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য অটুট লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা জীবনে সফলতা লাভ করতে পারবো। তিনি গতকাল সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে, আবুল খায়ের গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় দৃষ্টি চট্টগ্রাম আয়োজিত মার্কস দৃষ্টি ডিবেট চ্যাম্পিয়নশীপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এম এ মালেক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, আমাদের সবার মত থাকতে পারে, তাই সকলের কথাই আমাদের শুনতে হবে। ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে হবে এবং খারাপগুলোকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। এটাই তর্ক ও বিতর্কের পার্থক্য। বিতর্কের মূল চেতনা শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও যুক্তির অনুশীলন অপরিহার্য। বিতর্ক মানুষকে যুক্তিবাদী এবং ধৈর্যশীল হতে শেখায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি সাইফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী ও সিপিডিএল ফ্যামিলির সভাপতি প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ বকুল, চট্টগ্রাম জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য বৃজেট ডায়েস, দৃষ্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দীন মুন্না ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্না মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মালেক বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে চিন্তাশীল হতে হবে। চিন্তাচর্চা ব্যতীত কোনো সভ্য জাতি অগ্রসর হতে পারে না। মুক্তচিন্তা যে সমাজে নেই, সে সমাজ স্থবির হয়ে পড়ে। মুক্ত চিন্তা বাকস্বাধীনতার পরিপূরক, আর গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ তৈরির বিকল্প নেই।

তিনি শিক্ষার্থীদের দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে নিজেদের যদি গড়ে তুলি, স্বাবলম্বী হই তাহলে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এম এ মালেক গত ৩২ বছর ধরে চট্টগ্রামে বিতর্ক শিক্ষার এমন কার্যক্রম চালু রাখায় দৃষ্টিকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ অতিথি ইসরাফিল খসরু চৌধুরী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই তরুণ, তাই তাদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। রাষ্ট্র গঠনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতেই হবে। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি মৌলিক নীতি, আর বিতর্ক হলো সেই স্বাধীনতা চর্চার অন্যতম মাধ্যম। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে এটি অপরিহার্য। পাশাপাশি তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান কম বলতে, বেশি শুনতে, ধৈর্য ধরতে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থাকতে, এবং প্রতিটি কাজে পরিকল্পনা রাখতে।

সিপিডিএল ফ্যামিলির সভাপতি প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে যুক্তি, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বিতর্ক চর্চা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিশ্লেষণধর্মী চিন্তা, যুক্তি উপস্থাপন এবং ভিন্নমতকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করে। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে, তাই তাদের চিন্তা ও কর্মে নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম থাকা প্রয়োজন।

দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ বকুল বলেন, দৃষ্টি চট্টগ্রাম সব সময় তরুণদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করে। আমাদের লক্ষ্য তরুণদের যুক্তিবাদী চিন্তা ও মুক্তমত প্রকাশের চর্চার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের পথ তৈরি করা। বিতর্কের মাধ্যমে তরুণরা যেভাবে নিজেদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে, সেটি দেশের জন্য এক বড় সম্পদ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সাইফ চৌধুরী বলেন, বিতর্ক শুধু প্রতিযোগিতা নয় এটি একটি জীবনদর্শন। যুক্তি দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করা, অন্যের মতকে সম্মান করা এবং যৌক্তিকভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরা বিতর্কের মূল চেতনা। এই চর্চা ব্যক্তিগত উন্নয়ন ছাড়াও একটি ন্যায্য ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা রাখে। তিনি অংশগ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যারা যুক্তি ও সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে শিখছে তারাই প্রকৃত বিজয়ী।

এ প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের ৩২টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে। আজ ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা, আর ১৬ আগস্ট শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলাস্কায় সামরিক ঘাঁটিতে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আজ
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা