মানুষই পারে মানুষের সহমর্মী হতে

শিউলী নাথ | সোমবার , ১১ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

কচ্ছপ ও খরগোশের গল্প কে না জানে? স্যার হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, ‘কোন কালে এক কদর্য কচ্ছপ এক খরগোশকে হারিয়েছিল।এই গল্প শত বছর ধরে মানুষ শুনে আসছে। কিন্তু এরপরের ওই খরগোশ কত সহস্রবার কচ্ছপকে হারিয়েছিল, সে কথা আর কেউ বলে না’। সত্যি বলতে কী কোনো গল্প বা ঘটনার শেষটায় কী ঘটবে বা হবে আমরা ভেবেও দেখি না। কচ্ছপ ও খরগোশের গল্পের মত লোকমুখে শুনেই যেকোনো কথায় আমরা ক্ষান্ত হই। সেখানে কোনো ভুল ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টাও করি না। কথায় আছে, মানুষ অন্যের ভুল ধরার চেয়ে যেদিন সবার আগে নিজের ভুল ধরতে শিখবে, সেদিন মানুষ প্রকৃত মানুষ হবে। আমরা আমাদের ভুলগুলো কি আদৌ ধরতে পেরেছি নাকি ধরতে শিখেছি?

মানুষ সহজাত ধার্মিক, ভীরু ও বিশ্বাসপ্রবণ। তাই এই বিশ্বাসকে স্বার্থের কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করা হয়। হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, ‘স্বার্থ এমন এক বিষয় যা সিংহকে খচ্চরে এবং বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিণত করে’। প্রসঙ্গত ধর্মকে এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ বলেছেন, ‘মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তাহাই ধর্ম। যে ধর্ম পালন করতে গিয়া মানুষের অকল্যাণ করিতে হয়, তাহা ধর্মের কুসংস্কার মাত্র। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়’। জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছতে যেমনি মানুষের প্রয়োজন, তেমনি মানুষই জীবনকে নরক করতে যথেষ্ট। মানুষই পারে মানুষকে সান্ত্বনা দিতে, সহমর্মী হতে, সমব্যথী হতে, আনন্দ ভাগ করে নিতে। আবার সেই মানুষই সমাজ সংস্কৃতিকে নস্যাৎ করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

একটা সময় ছিল ছোটরা মানুষেরা ভুল করলে বড় মানুষেরা তা সংশোধন করে দিতেন। ঘরের মানুষ, এলাকার বা সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ যারা, তারা ছোটোদের সঠিক পথের নির্দেশ দিতেন। যে ধর্মেরই হোক না কেন সকলের মধ্যে একটা হৃদ্যতা কাজ করতো। দিন বদলের পালায় আজ বড় মানুষেরা বদলে গেছে। তাদের চিন্তাভাবনা চেতনা সব যেন ফিকে হয়ে আসছে। আজ বড়রা যেন প্রবল আগ্রহে উসকে দিচ্ছে ছোটদের। এতে কার লাভ কার ক্ষতি তা নির্ণয় করার মত চেতনা ছোট মানুষ বা বড় মানুষ কারোই হয়তো নেই। জ্ঞানী গুণীদের অপমান, অবমাননা, সঠিক ধারায় এগিয়ে না চলা সবকিছুতেই ছোটোদের তৎপরতা লক্ষণীয়। মানুষ হয়ে মানুষ রূপে ওদের প্রতিহত করে সঠিক দিক নির্দেশনার বড্ড প্রয়োজন। মুখোশের অন্তরালে কদর্য চেহারার আস্ফালন খুবই লজ্জাজনক। মানুষ নামের মাহাত্ম্য আজ লীন হতে বসেছে। হাটে, মাঠে, ঘাটে, অফিস আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র, ব্যবসাকেন্দ্র, শিল্প কারখানাসব জায়গায় যেন মুখোশ পরে বসে থাকা এক একজন মেকি মানুষ। আমরা মুখোশের আড়াল থেকে বের হয়ে আসি। আমাদের আসল চেহারা উন্মোচিত করি। মানুষ হয়ে জন্মে এই নামের সার্থকতা অর্জন করি। সেই সাথে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করি। নইলে আজকের মত এইদিন আমাদের জন্য চরমভাবে অপেক্ষা করবে। অনেক ভুলে যাওয়া কথার মধ্যে আবারও আলবার্ট আইনস্টাইন এর কথাটি স্মরণ করি, ‘অন্যের জন্য বেঁচে থাকা জীবনই সার্থক জীবন’। আর প্রজন্মের কাছে বলে যাই, ‘তোমার কী করা উচিৎ, তা তোমার চেয়ে ভালো আর কেউ বুঝবে না’ ম্যাট মরিস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক হেমন্তে
পরবর্তী নিবন্ধসমুদ্রের বিশালতায়