‘ঈশ্বরানন্দের জন্য বিষয়ানন্দ ত্যাগ’ এই দর্শনে আত্মনিবেদিত ঊনবিংশ শতকের যুবা সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর সন্ত রূপটি বাদ দিলেও তিনি এই উপমহাদেশের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবান পুরুষ এ নিয়ে দ্বিমত নেই। অস্বীকার করার মত মানুষ তিনি নন, আবার দেবতাও নন। তাঁকে দেবতারূপে গ্রহণ করার পূর্বে, কিংবা ‘স্ববিরোধী’ বা কিছু ইতিহাসবিদ ও সমাজতান্ত্রিকদের মতে ‘মতলববাজ বিবেকানন্দ’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করার আগে, তাঁকে জানা এবং পড়া দরকার। তিনি ছিলেন অতিন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের প্রধান শিষ্য এবং একজন পরিব্রাজক, দার্শনিক, লেখক ও সংগীতজ্ঞ।
উত্তর কলকাতার চেনা গলি পেরিয়ে শিকাগো ধর্ম মহা সম্মেলনে তাঁর পৌঁছানোর পথটি কিন্তু অতটা সহজ ছিলো না একজন ভারতীয় হিসেবে। তিনি সমগ্র ইউরোপ পরিভ্রমণ করেন সনাতন ধর্মের অন্তর্নিহিত আদর্শকে বিশ্ববাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এবং তাতে তিনি বহুলাংশে সফলও হয়েছেন। যৌবনের শুরুতে তিনি ছিলেন চরম যুক্তিবাদী। পরে শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ও আধ্যাত্নিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। মাহাত্ম্য গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসুর মত বোদ্ধা রাজনৈতিক নেতাও তাঁর দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সারা ভারতববর্ষে তো বটেই, সরা পৃথিবীর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবেকানন্দ আধ্যত্মিকতার বাণী প্রচার করে একটি দৃঢ় অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হন। প্রবীর ঘোষ কিংবা সমকালে অভিজিৎ রায় বা তাদের মত কিছু যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তক ও গবেষক ছাড়া আর তেমন কেউ উল্ল্যেখযোগ্যভাবে তাঁর সমালোচনা করেননি। তিনি পরিব্রাজক এবং সন্ন্যাস জীবন যাপন করলেও আড়ালে গৃহী জীবনেও ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমৃত্যু তাঁর মায়ের সেবা করেছেন, অনুজদের নানা ব্যক্তিগত ও সাংসারিক তদারকি করেছেন এবং পৌত্রিক সম্পত্তির শরিকি মামলাও লড়েছেন – যা বিভিন্ন বিশ্লেষকের কাছে স্ববিরোধতা হিসেবে ধরা পড়লেও তিনি যে সর্বান্তকরণে একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন, তার প্রমাণ মেলে।
আজ থেকে ১২৪ বছর আগে সরলাদেবী চৌধুরাণী স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে তাঁর ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ প্রবন্ধে লিখছেন – ‘ইচ্ছা করিলে বিবেকানন্দ স্বামী স্বদেশের অনেক কাজ করিতে পারিতেন। সমাজ সংস্কারকের দুইটি প্রধান উপাদান তাঁহাতে বর্তমান – পাণ্ডিত্য ও বাগ্মিতা, এবং তিনি নিজেকে কোন বিশেষ সমপ্রদায়ভুক্ত না করাতে সমপ্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত হিন্দুরই শ্রদ্ধাভাজন। প্রতীচ্য সভ্যতার সংস্পর্শে তাঁহার মার্জিত প্রাচ্য জ্ঞানালোকে মাতৃভূমি সমুজ্জ্বল করিবার ক্ষমতা তাহার ছিল। কিন্তু সে ক্ষমতানুযায়ী কর্তব্য তিনি স্বীয় কর্তব্য বলিয়া গ্রহণ করিলেন না। সে আমাদেরই দূরদৃষ্ট। হায়! আমাদের নৈতিক দূর্নিশায় যাহাকে সূর্যোদয় মনে করিয়াছিলাম,তাহা সূর্যোদয় নহে, – একটি একটি বৃহৎ তারার ক্ষণিক জ্যোতিমাত্র।’ (সরলাদেবী চৌধুরাণী প্রবন্ধ সংকলন। ভারতী, চৈত্র ১৩০৩। পৃষ্ঠা -৬০)
সে-সময়ে বিবেকানন্দের ধর্মীয় ভাবমূর্তিকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে বিবেকানন্দের স্বদেশীয় কর্তব্যে ঔদাসিন্যকে সাহসের সাথে তুলে ধরে পাঠকের মনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পেরেছিলেন। সম্ভবত তিনিই প্রথম নারী যিনি বিবেকানন্দের মানুষ রূপটি বিবেচনায় এনে তাঁর বিশ্লেষণ করেছিলেন। এই সাহসী কলমের অনুপ্রেরণায় এসেছিলেন সরোজিনী নাইডুর মত প্রতিবাদী কন্ঠস্বরেরা।
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে শিকাগো ধর্মসভা শেষ হবার পর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন স্বামী বিবেকানন্দ। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড ও কলম্বিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্থানে বক্তৃতার আমন্ত্রণ পান। এইসব বক্তব্যে তিনি হিন্দুধর্মের বাণী ও মাহাত্ম্য প্রচার করতে শুরু করেন।
১৯০০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাদোনাতে শেকসপিয়ার ক্লাবে তিনি রামায়ণের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে একটি বক্তব্য রাখেন। এটি তাঁর ‘বিবেকানন্দ রচনাবলি’ তে The Ramayna প্রবন্ধ নামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রবন্ধে তিনি সীতার চরিত্রের তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার উল্লেখ করেছেন ‘Be Sita!’ তিনি এই প্রবন্ধে বলেছেন – ‘Sita was a true Indian by nature, she never returned injury.’ এই কথাটি লক্ষ্য করলে বুঝবো, তিনি সীতাকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন কারণ – ‘She never returned injury. ‘সীতা কখনো প্রত্যাঘাত করেননি। এই দর্শনটিই হয়তো পরবর্তীতে গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনে কিছুটা প্রভাব ফেলেছিলো।
তবে সীতার মাহাত্ম্য বিশ্লেষণ করে স্বামীজি আরো বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন, কেন এদেশের নারীদের সীতার আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। একই প্রবন্ধে তিনি বলেছেন – ‘Though all this suffering she experiences, there is not one harsh word against RAMA.’ তিনি সীতার চরিত্রের মত সংগ্রামী, সীতার মত ধৈর্য্য, ত্যাগী, বিশ্বস্ত ও পবিত্র স্ত্রী হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
মূলত তিনি নারীকে পুরোপুরিভাবেই সি্বামীর অনুগামী হতে বলেছেন, যেমন সীতা। কিন্তু এখানে কোথাও সেই empowerment এর সুযোগ নেই যা তিনি অন্য একটি প্রবন্ধে ( ‘ নিবোধত’২৮ বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ২০১৪।
‘বিবেকানন্দের দৃষ্টিতে প্রবুদ্ধ ভারতীয় নারী ’
লেখক: প্রব্রাজিকা দিব্যানন্দপ্রাণা) বলে গেছেন। তাতে তিনি অধিকবার বলেছেন –
‘নারী স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ পাক’।
‘পূর্ণাঙ্গ নারীজীবনের আদর্শ হল পূর্ণ স্বাধীনতা ’ উন্নতির প্রথম শর্ত স্বাধীনতা।’ ( পৃষ্ঠা – ১৩৫)।
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যাদের মধ্যে সীতা চরিত্রকে আদর্শ চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বিবেকানন্দের অন্যতম নিকটতম শিষ্যা ভগিনী ক্রিস্টিয়ানার বয়ান পাওয়া যায় প্রব্রাজিকা দিব্যানন্দপ্রাণার একটি নিবন্ধে।
সেখানে নারী স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ বলছেন – ‘পূর্ণাঙ্গ নারীজীবনের আদর্শ হল পূর্ণ স্বাধীনতা’ ‘উন্নতির প্রথম শর্ত স্বাধীনতা।’ ( পৃষ্ঠা – ১৩৫)।
একই প্রবন্ধে বিবেকানন্দ আরো বলছেন – ‘সতীত্বই জাতির জীবন। ’
‘সীতা- আদর্শ নস্যাৎ করে আমাদের নারীজাতির আধুনিকীকরণের যে কোনও প্রয়াস বিফল হবেই এবং তাই আমরা দেখছি।’
বিবেকানন্দ নারীর empowerment এর কথা বলেছেন, বলেছেন – নারী স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ পাক। কিন্তু , যে সতী চরিত্রকে তিনি নারী জাতির আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন – রামায়ণের সেই সতী নিজে কতটা স্বাধীন ছিলেন!? সতীর empowerment- এর নজীর আমাদের কারো অজানা নয় আশা করি! নারীকে ধর্মের ফর্মূলায় রেখে তাকে দেবীর আসনে অধিষ্ঠিত করলেও বাল্যবিবাহ, সতীদাহ প্রথার সমর্থনেও তিনি একই ধর্মীয় ফর্মূলা ব্যবহার করে গেছেন। তিনি বলেছেন –
‘বাল্যবিবাহ হিন্দু জাতিকে পবিত্রতায় ভূষিত করিয়াছে ’
(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা ২য় খন্ড, পৃঃ১২)
‘প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হইবার পূর্বে বাল্যকালে বিয়ে দেয়া ভালো হবে, নইলে হবে ঘোর অনর্থ।’ ( ভারতীয় নারী, উদ্বোধন, পৃ ১৫) ।
স্বামীজি ও রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন, মাত্র বছরখানেকের বয়সের দূরত্বে। যৌবনে স্বামী বিবেকানন্দের ঠাকুরবাড়ি যাতায়াতের কথা কারো অজানা নয়। রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যেকজন ব্রাহ্মধর্মানুরাগী তরুণকে নিয়ে ব্রাহ্ম ধর্ম উপাসনা পদ্ধতির চর্চা শুরু করেছিলেন – বিবেকানন্দ তাদর একজন। বিবেকানন্দ কেশব সেনের ব্রাহ্মধর্ম সমাজে যোগ দেন ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে। পরে ১৮৮৬ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি ‘সঙ্গীত কল্পতরু’ নামে একটি গানের সংকলন সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। সংকলনটি ছিলো বাংলা গানের। এই গ্রন্থে বিজয় কৃষ গোস্বামী, যদুভট্ট, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কীর্তন, বাউলগান, ভজন গান ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের নিজের ১২ গান ছিলো। ১০টি গান রবীন্দ্রনাথের নামে, একটি ভানুসিংহ ছদ্মনামে এবং একটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে (ভুলক্রমে!)।
রবীন্দ্রনাথ নিজে বিবেকানন্দ সম্পর্কে বলেছেন – ‘ভারতকে যদি জানতে চান, বিবেকানন্দকে জানুন। If you want to know India, study Vivekananda. There is in him everything positive, nothing negative”. (Chintanayak Vivekananda pg.981)।
তবে বিবেকানন্দ পরে এই ব্রাহ্ম সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে যখন সাকার আরাধনায় ব্রতী হলেন, তখন নিজেকে তো বটেই, নিজের শিষ্যদেরও আগলে রাখতেন তাদের স্পর্শ থেকে। ভগিনী নিবেদিতাকে তিনি সতর্ক করেছেন- ‘তুমি যতদিন ওই ঠাকুর পরিবারের সাথে মেলামেশা চালিয়ে যাবে, আমাকে বারবার সাবধান করে যেতেই হবে। মনে রেখো, ঐ পরিবার বঙ্গদেশকে শৃঙ্গারের বন্যায় বিষাক্ত করছে।’
বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভালো কিছু বলেছেন এমন কোনো পাকা প্রমাণ মেলেনি কোথাও। বরং কখনো কখনো ব্যঙ্গ করেছেন। পরিব্রাজক’ গ্রন্থে স্বামীজি যে-সব কবিকে নিয়ে ঠাট্টা করেছেন, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথও আছেন। তিনি লিখছেন ‘‘ঐ যে এক দল দেশে উঠেছে, মেয়েমানুষের মতো বেশভূষা, নরমনরম বুলি কাটেন, এঁকে বেঁকে চলেন, কারুর চোখের উপর চোখ রেখে কথা কইতে পারেন না আর ভূমিষ্ঠ হয়ে অবধি পিরীতের কবিতা লেখেন, আর বিরহের জ্বালায় ‘হাসান-হোসেন’ করেন।’’
তবে রবীন্দ্রনাথ নিজেও তাঁর যৌবনের কিছু সময়ের উদভ্রান্ত অবস্থা নিয়ে পরে লিখেছেন। ‘জীবনস্মৃতি’তে তিনি বলেছেন, সেসময় কিছুকালের জন্য তাঁর একটা সৃষ্টিছাড়া রকমের মনের ভাব ও বাহিরের আচরণে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তা ছিলো খুব সাময়িক। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্র জীবনীকার অধ্যাপক প্রভাতকুমার পাল বলেছেন – ‘বিবেকানন্দের দুর্ভাগ্য, তিনি রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী কবিতা ও গদ্যরচনার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। থাকলে এরূপ উক্তি করতে তিনি অবশ্যই দ্বিধাগ্রস্ত হতেন।’
হয়তো সাকার ও নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনা তাদের দুজনকে দুই মেরুতে ঠেলে দিয়েছিলো। এই বিরোধতা হয়তো পুরোপুরিভাবে ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে নয়। কিন্তু মূল বিষয় হতে পারে একজন ধর্মীয় নেতার সাথে অন্তরে উপনিষদ জাড়িত করা ঋষি ও কবির আদর্শিক দ্বন্দ্ব। এভাবেই আর্য উদারধর্মনীতির সনাতন রূপটি কখনো কখনো মুক্তচিন্তার সংস্কৃতির সাথে মিতালির হাত ছেড়ে দিয়ে একা একা চলতে গিয়ে রুক্ষ, শুষ্ক, কঠিন অনুর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
পাশ্চাত্য সভ্যতা ও জীবন যাপনের প্রতি তাঁর ঝো্ক ছিলো। পাশ্চাত্য খাদ্যভ্যাসে অনুরক্ত স্বামীজি ভীষণ পছন্দের ছিলো চপ, কাটলেট, আইসক্রিম। একজন সাধারণ বাঙালির মতই ভোজন রসিকতার সুনাম ও দুর্নাম ছিলো তাঁর। তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা হেডলাইন করেছিলো – ‘A meat eating swami’ তবে শোনা যায়, তাঁর মৃত্যু হয়েছিলো মাংস খেয়ে নয়, ইলিশ মাছ খেয়ে। চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞাও অগ্রাহ্য করতেন তিনি এই ভোজন রসিকতার কারণে। অতিভোজনে চেহারা বীরত্বপূর্ণ ও দিব্যকান্তি হলেও, প্রায় সময় তিনি অসুস্থ থাকতেন।
বিবেকানন্দের স্ববিরোধীতা ও জীবনাচরণ নিয়ে বিগত অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে তর্ক বির্তক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। এই বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য কোন বিশ্বাসকে আহত করা কিংবা, কোন নির্দষ্ট ব্যক্তির সম্মানহানি নয় কোনভাবেই। এই সমস্ত বিশ্লেষণের মূল নিয়ামক ছিলো যুক্তি। যে কারো মধ্যেই দেবতার উপস্থিতি কল্পনা করে তাঁকে অবতার কিংবা দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত করা অযৌক্তিক। বিবেকানন্দ একজন প্রজ্ঞাবান ধর্মীয় নেতা ছিলেন। তিনি একজন দার্শনিকও বটে। তিনি তাঁর সমকালে সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার করে মানুষের মাঝে হিন্দুত্ববাদের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন, এবং তা এতই শক্তিশালী ছিলো যে, শত বছর পরেও তা আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। তা সত্ত্বেও বিবেকানন্দ একজন মানুষ। তাঁর মধ্যে একজন মনুষ্যসুলভ রাগ, হিংসা, লোভ, স্ববিরোধীতা সমস্ত কিছুই বর্তমান ছিলো। কখনোই অন্ধ, অযৌক্তিক বিশ্বাস থাকা উচিত নয়, এই সত্যটুকু বুঝতে পারলে দেশে-দেশে ধর্মের নামে সমস্ত বজ্জাতি থেমে পৃথিবী সুশীতল হবে একদিন।