সম্প্রতি একটি ইলেকট্রিক গীটার কিনতে টিচার শাহনাজ জামান, বন্ধু লাকি, ছেলে মহাম্মদকে নিয়ে মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে মেলোডি নামের দোকানের সামনে উবার থেকে নামি। লাকি সাথে সাথে মাথায় ছাতা ধরে, ছেলে মহাম্মদ ধরে হাত, স্রোতের মতো পানি মাড়িয়ে গিয়ে উঠলাম দোকানে। শাহনাজ সামনে এগিয়ে গিয়ে বিক্রেতার সাথে কথা বলছে, আমি বিস্মিত চোখে বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র দেখছি। ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন বাজনা ও সুরের প্রতি আমার প্রবল ভালো লাগা। কিন্তু শিখার সুযোগ হয়নি তখন। এবারও খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম, বাসার কর্তা না বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে সে বেশ উৎসাহ দেখায়। আমার চোখ আটকে গেলো টুকটুকে লাল একটা গীটার এর প্রতি। ইশ কি সুন্দর। দেখলাম শাহনাজ সেটাই দামদর করছে। আমিতো মহা খুশী। এবার শাহনাজ নজরুল গীতি, মোর প্রিয়া হবে, এসো রানি, বাজাতে থাকলো। মুগ্ধ হয়ে তার বাজানো গান শুনছি, এমন সময় আমার তন্ময় ভাব কাটল ছেলের কথায়। ও কানে কানে বলছে, আম্মা, এতো দেখি, বাঁ হাতের কাজ বেশি। তোমার বাঁ হাত যেভাবে কাঁপে, তুমি কিভাবে বাজাবে, বুঝতে পারছি না। আমি ঘাবড়ে গেলাম, এমন বাঁ হাত নিয়ে কিভাবে বাজাবো? ছেলে এবার হেসে বলল, এবার এই গীটার শিখার উছিলায় তোমার হাত কাঁপা ঠিক হয়ে যাবে। কথাটা খুব মনে ধরল প্রথম দিকে বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে বার ধরে রাখতে পারছিলাম না। এরপর দেখি দ্রুত তারের উপর হাত চালাতে পারি না। হাত শক্ত হয়ে থাকে। শাহনাজের ধৈর্য অনেক। সে নিয়ম করে প্রথম দশ মিনিট হাতের ব্যায়াম করাতো। ঠিক করলাম বাসায় ফিজিও থেরাপিস্ট আনবো। এই গিটার শিখার উছিলায় আমার এই হাত ঠিক করতে হবে বন্ধু লাকি একটি মেয়ে ফিজিও থেরাপিস্ট ঠিক করে দিলো। চলতে থাকলো হাত ঠিক করার প্রচেষ্টা আলহামদুলিল্লাহ, আমার হাত কাঁপা এখন প্রায় নেই। গীটার শিখতে যেয়ে এটা আমার বড় পাওনা। আজ গীটার ক্লাসে যখন রবীন্দ্র সঙ্গীত বড় আশা করে এসেছিল, কাছে ডেকে লও বাজাচ্ছিলাম, শাহনাজ খুব খুশী হয়ে বলতে থাকলো, মিতা আপা মনে আছে, প্রথম দিকে তারের উপর মাঝে মাঝে আমি আপনার হাত ধরে চালিয়ে দিতাম। আমি চুপ করে থেকে বললাম, মানুষ পারে না এমন কিছু নেই শাহনাজ, কিন্তু আমরা বুঝি বড় দেরীতে।