‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ রাষ্ট্রে ও সমাজে বিভক্তির কোনো সুযোগ থাকবে না। বাংলাদেশে কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতি হবে না। দেশ পরিচালনা হবে প্রত্যেকটি নাগরিকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং প্রত্যেকটি নাগরিকের পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশি। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজ ও দেশ গড়ব। গতকাল রোববার সকালে নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সম্মিলিত বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শান্তি শোভাযাত্রা–পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শোভাযাত্রাটি বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকে শুরু হয়ে এনায়েত বাজার, জুবিলী রোড, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী মোড়, লালদিঘি পাড়, আন্দরকিল্লা, চেরাগী পাহাড় মোড় হয়ে পুনরায় বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ৬১টি সংগঠন অংশগ্রহণ করে।
উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রাক্তন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন, আর কে কে বাংলাদেশের ব্রাঞ্চ মিনিস্টার মরি মাসানোবু, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চিন্তা–চেতনা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য; আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ব। এখানে বিভক্তির কোনো সুযোগ নেই। সংখ্যাগরিষ্টের রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। আমরা সবাই মিলে দেশ গড়ব। তিনি (জিয়াউর রহমান) বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে এনেছেন এজন্য। এদেশে বসবাসরত সমস্ত মানুষ আমরা বাংলাদেশি। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, এ কথাটা পরিষ্কার। আমরা মেসেজ দিতে চাই, এ দেশ সবার। সবাই মিলে গড়তে হবে।
তিনি বলেন, এ শান্তি শোভাযাত্রায় দেশের রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকতে হবে। অপরের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু অপরের যে মত সেটাকে সম্মান জানাতে হবে। ভিন্ন থেকেও আমরা একসঙ্গে চলতে পারব, সম্মান জানাতে পারব। কোনো অসুবিধা নেই। সবাইকে সহনশীল হতে হবে। দেশ যেন আরো শান্তিপূর্ণ রূপ নেয়। এ দেশের মানুষ একটা স্থিতিশীল বাংলাদেশ চায়। যেখানে সবাই উঠে আসবে। আজকের শোভাযাত্রা সেটারই প্রতীক হিসেবে মনে করি।
খসরু বলেন, বুড্ডিস্ট কমিউনিটিতে যারা দেশে আছেন, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেই বেশি বসবাস করেন। তাদের সাথে আমাদের ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া। অনেক বন্ধু একসাথে লেখাপড়া করেছি। বৌদ্ধ পূর্ণিমার যে শান্তির বাণী এটা সারা বিশ্বে আছে এবং বাংলাদেশের জন্য বেশি প্রযোজ্য। আমরা বিগত ১০–১৫ বছর অনেক অশান্তির মধ্যে থেকেছি। এত অশান্তির মধ্যে থেকেছি, এ সমাজ ভেঙে গেছে, রাজনীতি ভেঙে গেছে, দেশ ভেঙে গেছে, ব্যবসা–বাণিজ্য সবকিছু, আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এমন দেশ, সমাজ গড়তে চাই, যে দেশ হবে শান্তির। আমরা আর অশান্তি চাই না বাংলাদেশে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামকে আমরা ক্লিন, গ্রিন, হেলদি সিটির পাশাপাশি একটি শান্তির শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। একইসঙ্গে এটিকে একটি নিরাপদ শহর হিসেবেও গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান আমরা সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।
তিনি বলেন, অতীতেও চট্টগ্রামে যখনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হয়েছে, আমরা সাহসিকতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেছি। ভবিষ্যতেও সে ঐতিহ্য বজায় রাখব। ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে এই শহরে কেউ বৈষম্যের শিকার হবেন না, সেটি আমরা নিশ্চিত করব।
লায়ন রনি কুমার বড়ুয়া ও রোটারিয়ান সপু বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রন্জন বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও শোভাযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী রুবেল বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যাপিকা লায়ন ববি বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহসভাপতি মৃদুল বড়ুয়া চৌধুরী, বিএলআই বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক মৃণাল কান্তি বড়ুয়া, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সদস্য অশোক কুমার বড়ুয়া প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অরুন কুমার বড়ুয়া দেবু, বিপ্লব বড়ুয়া, প্রফেসর তুষার কান্তি বড়ুয়া, ড. সৌমেন বড়ুয়া, প্রকৌশলী অসীম বড়ুয়া, লায়ন ছোটন বড়ুয়া, সৌমেন বড়ুয়া ডিম্পল, বৌদ্ধ সংগঠন বিডিটি কর্মকর্তা প্রদীপ বড়ুয়া, সন্তু বড়ুয়া, উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান অমরেশ বড়ুয়া চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক সুমন বড়ুয়া বাপ্পী, নারীনেত্রী অধ্যাপিকা শুক্লা বড়ুয়া টিমন, ঝুম্পা বড়ুয়া ও নীলিমা বড়ুয়া।