মানসিক ভারসাম্যহীন বিধবার প্রতি নির্মমতা

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১৫ জুলাই, ২০২৩ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পঞ্চাশ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন এক বিধবা নারীর ওপর বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে। দা দিয়ে কোপানোসহ বিভিন্ন কায়দায় শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর রশিতে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিওচিত্র গতকাল শুক্রবার বিকেলের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নেটিজেনরা সেই ভিডিওচিত্র দেখে ঘটনাটিকে অমানবিক, বর্বরতা ও জঘন্যতম আখ্যা দিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারপূর্বক কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্র জানায়, নির্যাতিতা বিধবা নারীর নাম ইছমত আরা কাশমীর। তিনি চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রুস্তম চৌধুরী পাড়ার শামসুল আলমের মেয়ে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগীর বড় বোন জিন্নাত আরা জানান, আমার বোন প্রায় এক যুগ আগে স্বামীহারা হন। এরপর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একপর্যায়ে উন্মাদের মতো আচরণ করায় তাকে ঘরবন্দি করে রাখা হয়। পরে অবশ্য মোটামুটি স্বাভাবিক আচরণ করাসহ নিয়মিত নামাজও পড়ে আসছিল। তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজের পর সবার অগোচরে ইছমত বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পথে যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাদেরকে বলেছে সে আজিজনগরস্থ চাচার বাড়ি যাচ্ছে। পরবর্তীতে তার খোঁজ নেয়া শুরু হয়। এরমধ্যে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকজন লোক তাকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসে। তখন সবাই মনে করেছিল হয়তো সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তার এই অবস্থা হয়েছে। এরপর তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে জানতে পারি আজিজনগরস্থ চাচার বাড়িতে যাওয়ার জন্য পাশের ইউনিয়ন কৈয়ারবিলের ইসলাম নগর এলাকার একটি বাড়ির কাছে রাখা গাড়িতে উঠে পড়ে সে। এরপর তাকে ওই গাড়ি থেকে নামানোর চেষ্টা করলেও নামানো যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় গাড়ির মালিক বদু ড্রাইভারের দুই ছেলে, স্থানীয় চৌকিদার লিয়াকতসহ আরো একাধিক নারী মিলে বোনকে দা দিয়ে কুপিয়ে, লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে, হাতপায়ে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে হিঁচড়ে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের পাশে ফেলে যায়। এরপর পথচারী লোকজন বোনকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খ ম আওরঙ্গজেব বুলেট দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার ইউনিয়নের ওই নারী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তা জানা সত্ত্বেও একজন নারীর প্রতি যে অমানবিক ও জঘন্যতম নির্যাতন করা হয়েছে তা কোনোভাবেই সভ্য সমাজের কারো দ্বারা সম্ভব নয়। তাই বিষয়টি জানার পর ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল জব্বার দৈনিক আজাদীকে বলেন, এই ঘটনায় থানায় এজাহার দিতে পরিবারের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদের কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তসহ তাদের আটক করতে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরিয়াজউদ্দিন বাজার এখন অপরাধের আখড়া
পরবর্তী নিবন্ধনিজস্ব অর্থায়নে পোস্টার বোর্ড করবে চসিক