চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা সর্বশেষ গত ৫ বছর পাসের হারের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময়ে ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর (২০২০ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত) এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমলেও গত বছরের তুলনায় এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে তার আগের তিন বছর (২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত) জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি ছিল। এ ছাড়া এই শিক্ষা বোর্ডে এবারও ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে। গত ১৫ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ সালের প্রকাশিত ফল পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা যায়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অডিটরিয়ামে এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম। ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান।
প্রকাশিত ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা গতবার (২০২৩) ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৬৯ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫৭৫৯ জন এবং ছাত্র ৪৫১০ জন। আর ২০২৩ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ছয় হাজার ৩৩৯ জন। এর আগের তিন বছর জিপিএ ৫ বেশি ছিল। এর মধ্যে ২০২২ সালে ১২ হাজার ৬৭০ জন, ২০২১ সালে ১৩ হাজার ৭২০ জন এবং ২০২০ সালে ১২ হাজার ১৪৩ জন ছাত্রছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছিল। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২৮২টি কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ছয় হাজার ২৯৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৪১৬ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৭৪ হাজার ১২৫ জন। যা গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ কম। তিনটি শাখার মধ্যে পাসের হার বিজ্ঞানে ৯১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং মানবিক বিভাগে ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এবার ছাত্র পাসের হার ৬৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
তবে পরীক্ষার ফলাফল যা’ই হোক না কেন শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে শিক্ষাবিদরা নানা অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সমপ্রসারণ হলেও শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে কথা থেকে যায়। এ ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও বিস্তৃত শিক্ষানীতির অভাব যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সঠিক পরিকল্পনা এবং দক্ষ শিক্ষকের অভাব।
শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষার আসলে কোনো অর্থ নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানের ক্রমাবনতি রোধ করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। গুগণত শিক্ষা অর্জনে টেকসইকরণসহ বিশ্বমানের শিক্ষা এবং যুগোপযোগী শিক্ষার জন্য যুগোপযোগী নীতি এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জিপিএ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতিও কিছুটা দায়ী বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। শিক্ষার মান বাড়াতে যা যা করণীয়, সময়মতো প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। কী ধরনের শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষার্থীরা বের হচ্ছেন, সেটার ওপর নির্ভর করছে তাঁরা ভবিষ্যতে কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। এখন মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মানসম্মত শিক্ষার দিকেও নজর দিতে হবে।
এবার শুরু হবে উচ্চতর শ্রেণিতে ভর্তিযুদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির এই সংকট নতুন কোনো বিষয় নয়। বছরের পর বছর ধরে চলে এলেও এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ফলে বহু মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতাকে অনিশ্চিত করে তোলে বা শিক্ষাজীবনকেই বিপর্যস্ত করে। রাষ্ট্র কিংবা শিক্ষা নীতিনির্ধারক কর্তাব্যক্তিরা কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।