মানবতা

আলেয়া আরমিন আলো | শুক্রবার , ১১ এপ্রিল, ২০২৫ at ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

শহরের ফ্ল্যাট বাসার খাঁচার সংসারেও আমরা একা হাতে সকল কাজ সামলে উঠতে পারি না বলেই বাসায় কাজের সহযোগী নিয়োগ করি। তারা হয় কখনো পার্মানেন্ট কখনো আবার সময় বাঁধা ছুটা কাজের মানুষ। তারাও তাদের পেটের দায়ে অভাবের তাড়নায় কিছু টাকার বিনিময়ে আমাদেরকে কাজে সহযোগিতা করে যায়। তাতে আমরাও বাড়তি কিছু সময় পাই নিজেদের আরাম আয়েশের জন্য। সংসারটাও তাদের সহযোগিতায় সুন্দর ও গোছানো থাকে সবসময়।

আমাদের বাসায় যে মানুষটি টাকার বিনিময়ে হলেও নিজের এতটা সময় শ্রম ও ঘাম ঝরিয়ে কাজ করে যায় কেবল দুমুঠো খাবার, পরনের কাপড় ও সন্তানের শিক্ষার টাকা জোগাড় করতে, তাদের প্রতিও আমাদের কিছু দায় ও দায়িত্ব থাকে। অহেতুক তাদের সাথে খেঁচখেঁচ করা, খাবার কম কিংবা বাসিপঁচা খাওয়ানো, অথবা আমরা যা খাচ্ছি তা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা একেবারেই ঠিক নয়। এরমধ্যে কিছু অল্প বয়সী দরিদ্র পরিবারের সহযোগীও নিয়োগ করি কেবল ছোটখাট ফরমায়েশ খাটানোর জন্য। তারা অল্প বয়সে মা বাবা ভাইবোন পরিবার এবং নিজস্ব পরিবেশের বলয় ছেড়ে দূরের শহরে এসে আমাদের সাথে বসবাস করে কেবল অতিমাত্রার দারিদ্র্যতার কারণেই। তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ না করে বরং নিজের পরিবারের ছোট সদস্যদের মতোই আচরণ করা উচিত। যাদের ভিতর ন্যূনতম বিবেক এবং মানবিক বোধ আছে তারা অবশ্য এমনটাই করে থাকেন।

অথচ, কিছু পরিবারে এদের সামান্য মর্জি বা আবদারকে কেন্দ্র করে অহেতুক ঝামেলা করে যা মোটেই মানবিকতার মধ্যে পড়ে না। নিজের পরিবারের শিশুদের হাজারটা মর্জি তারা সাদরে গ্রহণ করলেও ছোট কাজের সহযোগীর আচরণে খুব স্ট্রিক থাকে। সকলেরই বোঝা উচিত যে, শিশুটি হয়তো মনে করছে নতুন এই পরিবারে আপন বলতে তার কেউই নেই। সেজন্যই আগে তাকে বেশ কিছুটা সময় ধরে আদর ও আবদারে নিজের পরিবারের অংশ হিসেবে মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে হবে। তারপর হয়তো শিশুটি নিজে থেকেই এই পরিবারের মানুষ হয়ে উঠবে এবং পরিবারের নিয়মনীতি মেনে চলতে শুরু করবে। আমরা যদি নিজেদের শিশুদের ভুল ক্ষমা করে সব ভুলে তাকে আপন করে নিতে পারি তবে কেন কাজের সহযোগী শিশুটির ভুলগুলোকে এতটা বড় করে দেখবো কিংবা তাকে কটুকথা শুনাবো? সেও তো কারো সন্তান। কেবল অভাবের তাড়নায় যে শিশুটি ভিন্ন শহরের ভিন্ন পরিবেশে এসে বসবাস করছে, তার তো এই ভিন্ন পরিবেশের অপরিচিত পরিবারে মানিয়ে নিতে সময় লাগবেই। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষই যেখানে ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খায়, সেখানে ছোট একটি শিশুর মানসিক কষ্ট হওয়াটা তো খুব স্বাভাবিক বিষয়। শিশুদের মনও তো হয় খুব আবেগি ও সংবেদনশীল।

আসুন, আমরা ঘরের শিশু ও কাজের সহযোগী শিশুদের মধ্যে নিজেদের মনে আকাশপাতাল ভেদাভেদ সৃষ্টি না করে নিজেদের বাসার কাজের সহযোগী ছোট শিশুদের প্রতি সদয় হয়ে তার অহেতুক আবদার, মর্জি ও জেদকে ধৈর্যের সাথে সময় নিয়ে সহানুভূতি দিয়ে মোকাবেলা করি। আমাদের পরিবারটিকে নিরাপদ আপন আশ্রয় হিসেবে তার কাছে উপস্থাপন করি। এতে শিশুটি যেমন মনে ও শরীর ভালো থাকবে তেমনি আল্লাহও খুশি হবে। এতে মানবতারও জয় হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশরৎকুমারীর চৌধুরাণী : রবীন্দ্রঘনিষ্ঠ লেখিকা
পরবর্তী নিবন্ধমানুষের শত্রু মানুষ