মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আঁরার ইউনূস : আইয়ুন জে

অভীক ওসমান | মঙ্গলবার , ১৩ মে, ২০২৫ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস যখন নোবেল লাভ করলেন দৈনিক আজাদী হেডলাইন করেছিল ‘আঁরার ইউনূস নোবেল পাইয়ে’। দৈনিক আজাদীর স্বাগতম বা ওয়েলকামের পরিবর্তে ‘আইয়ুন জে’ এ ধরনের একটা সম্বোধন ব্যবহার করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পরে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে এই প্রথম চট্টগ্রাম আসছেন। আমরাও বলি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ‘আইয়ুন জে’।

অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ সদব্যবহার :প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিধবার হাতে একটা সিম বিচিও একটা পুঁজি।’ গত শতাব্দীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অভ্যন্তরীণ সম্পদের এ ধরনের বাস্তবসম্মত মন্তব্য চট্টগ্রাম চেম্বার তরুণ কর্মকর্তার মধ্যে শিহরণ এনে দিয়েছে। গরীবের অর্থনীতিবিদ খ্যাত অপর নোবেল লরেট অমর্ত্য সেনও এমনতর কথা বলেননি।

১৯৮৮ জুলাই সালে তৎকালীন চেম্বার প্রেসিডেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার’ শীর্ষক দুইদিন ব্যাপী সেমিনার আয়োজন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে এর সাজেশন তৈরির জন্য আমীর খসরুর আমন্ত্রণে ড. মুহম্মদ ইউনূস বাদামতলীস্থ চেম্বার ভবনে প্রেসিডেন্ট কক্ষে এসেছিলেন। ড. মুহম্মদ ইউনূস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আমি তিনজনে মিলে শ্রমলব্ধ প্রচেষ্টায় দিনব্যাপী সাজেশন তৈরি করেছিলাম। এরশাদ আমলের শেষ দিকে স্যার বলছিলেন, ‘ওসমান এগিন গভর্নমেন্ট একসেপ্ট ন গরিবু’ (এ্যানুয়েল রিপোর্ট, সিসিসিআই ১৯৮৮৮৯)

নদীমাতৃক বাংলাদেশ : এরপর ইঞ্জিনিয়ারস্‌্‌ ইনস্টিটিউট হলে সোশ্যাল বিজনেসের এক বক্তৃতায় স্থল পথে চাপ কমানোর জন্য তিনি নদীমাতৃক বাংলাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য নৌ পথ ব্যবহার করতে বলেছিলেন। একবিংশের শুরুতে ইউরোপে ট্রেন ভ্রমণের সময় ‘কী চমৎকার দেখি’ পাশে নদীপথে লরি বোঝাই জাহাজ যাচ্ছে।

আমাদের প্রেক্ষাপটে : নৌপথে মনোযোগ বাড়ানো হলে সড়কপথের ওপর চাপ অনেকটা কমে যাবে। নৌপথে ৯ হাজার টন পণ্য নিতে তিনটি লাইটার জাহাজ লাগবে। কিন্তু একই পরিমাণ পণ্য সড়কপথে নিতে প্রয়োজন হবে প্রায় ২০০টি ট্রাকের। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিরপ্তানি ক্রমে বাড়ছে। ছয় বছর আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ পণ্য হ্যান্ডলিং করছে চট্টগ্রাম বন্দর। নৌপথ এখন চালু থাকলেও সাশ্রয়ী নয়। যদি নৌপথ নিরাপদ করি তাহলে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহন ব্যয় কমে যাবে অনেক। এতে করে বাজারে পণ্যের দামও কমবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে যে পণ্য আসে এর ৮০ ভাগই যায় সড়কপথে। অথচ আমরা যদি সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটকে নদীবন্দর করতে পারি, তাহলে অর্থ ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে দারুণভাবে। বরিশালে এখন পণ্য নিতে ঢাকা হয়ে যেতে হয়। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়। অথচ কুমিরা ঘাট থেকে আমরা যদি জাহাজে পণ্য পাঠাই তাহলে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। এতে করে পণ্য পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে অর্ধেক। একইভাবে সড়কপথেও বিকল্প তৈরি করতে হবে। ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চাপ কমাতে মিরসরাই থেকে নারায়ণহাট হয়ে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির একটি সংযোগ সড়ক তৈরির সুযোগ আছে। মাত্র ১৭ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করলে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পথ কমে যায়। এর ফলে চট্টগ্রাম শহরের ওপরও চাপ কমবে।

বিকেন্দ্রীকরণ : ১৯৮০ সালে জেনারেল জিয়া বেপজা এ্যাক্ট ১৯৮০ (X) দেশ অনুযায়ী বেপজার হেড কোয়ার্টার করেছিলেন। আগ্রাবাদস্থ ছোট অফিসে মাহমুদুল হক, ডিজিএম মাহবুব রহমানের অফিস শুরু হয়। এরশাদ আমলে কিহাকসাং এর ইয়াংওয়ানসহ অনেকগুলো দেশ ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করে। পরে বেপজা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এএএম জিয়া হোসেনকে রেখে গোটা বেপজা ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। অনুরূপভাবে বাংলাদেশ টি বোর্ড, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বিপিসি, কর্ণফুলী গ্যাস বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাফহার্টেড, ঢাকায় থাকেন। শোনা যায় স্ক্যানিং সিগনিচার দিয়ে কাজ চলে। এগুলোর কার্যকরভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করা হোক। এদিকে রূপার খনি খ্যাত শিপ ব্রেকিং ও রিসাইক্লিং এর ১২৫টি ইয়ার্ড ছিল। বর্তমানে তা ২৫টি দেশে দাঁড়িয়েছে। এই সেক্টর প্রতিবছর সরকারি কোষাগারে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ১৬৩টি চা বাগানে উৎপাদিত ৬০ মিলিয়ন কেজি চা পাতা চট্টগ্রাম থেকে নিলাম হতো। কিন্তু শ্রীমঙ্গলে আলাদা একটা অকশান খোলা চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ।

চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন : এরশাদ আমলে বর্তমান মা ও শিশু হাসপাতাল ভবনে হাইকোর্টের অস্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। উপজেলা পর্যায়েও তা বিস্তৃত করা হয়। কিন্তু ওভারহেড এক্সপেনডিচার, অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে তা গুটিয়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি আইনবিদ, মানবাধিকার সংগঠক ও পরিবেশবিদ অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান ও অন্যান্য ল’ইয়াররা বাণিজ্যিক রাজধানী ও মহাবন্দরনগরী হিসেবে মেরিটাইম জুরিসডিকশান, পরিবেশ বিষয়ক, অধিক বিচার প্রার্থীর হয়রানি রোধে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের দাবি করেছেন।

চীনের কুনমিং : ১৯৯৯ সালে আমি ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস প্রোগ্রামে মার্কিন মুলুকে ভ্রমণ করেছিলাম। ভিজিট শেষ হয় নিউইয়র্কে। শপিং করার জন্য চলে গেলাম চায়না টাউনে। অনেক স্বল্প খরচে আমি ও আমার টিম শপিং করেছিলাম। ১৯৯২৯৩এর দিকে চট্টগ্রাম চেম্বার চট্টগ্রাম থেকে ডাইরেক্ট কুনমিং ফ্লাইট চালু করে ট্রেডিং ও যাত্রী পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়। এখন চীনবাংলাদেশ বাণিজ্য তুমুলভাবে আলোচিত হচ্ছে। আমাদের মনে হয় এর দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।

সেভেন সিস্টার : প্রধান উপদেষ্টা ভারতের ল্যান্ড লকড, নর্থ ইস্টার্ন রাজ্য বা সেভেন সিস্টার, নেপাল, ভুটান ইত্যাদির সাথে বাণিজ্যের কথা বলছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার ২০০২২০০৪ দিকে Enhancing the Trade and Investment Between Bangladesh and Northeast India শীর্ষক একটি স্টাডি রিপোর্ট প্রণয়ন করে। এর ফসল হিসেবে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম থেকে সিমেন্টসহ বেশকিছু পণ্য ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে রপ্তানী শুরু হয়। উল্লেখ্য, ASEANF এবং SAARC এর সংযোগকারী হিসেবে অচিরেই এ অঞ্চল Geopolitiesএবং ব্যবসাবাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। অন্যদিকে, দেশের খ্যাতনামা চিন্তক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান চট্টগ্রাম সম্পর্কে ‘গ্লোবাল পোর্ট, গ্লোবাল সিটি’র ধারণা দিয়েছেন। সরকারের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ রেফারেন্স নিতে পারেন। চেম্বারের সাবেক ডাইরেক্টর বিশিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ নেতা মরহুম ম ছলিমুল্লাহ ও আমি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সাথে হরিণা টেগামুখ দিয়ে কাস্টম চেকপোস্ট স্থাপন করে মিজোরামের সাথে অফিসিয়াল বাণিজ্য শুরুর কথা বলেছিলাম। কিন্তু কাস্টম অফিসারদের খাদ্য, পানি, বাসস্থান ইত্যাদির অজুহাতে আর বাস্তবায়ন হয়নি। এটা চালু হলে ফ্রুটস সহ এগরোভেইজড প্রোডাক্ট অনেক কম দামে আমদানী করা যাবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর : গত ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন নিয়ে রূপকথার গল্প শোনা গিয়েছিল। গভীর সমুদ্রবন্দর বেটার্মিনাল, লালদিয়ারচর, মাতারবাড়ি, মহেশখালী প্রকল্প ইত্যাদি। মূলত এমপি মিনিস্টারও কিছু পোর্ট ইউজারর্স লুটপাট করেছে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি ১৪টি গ্যানট্রি, বার্ষিক হেনলিং ক্ষমতাসম্পন্ন, নিউমারিং জেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ দিতে চাইছে। ২ মে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুর আলম ৫০১০০ বিনিয়োগকারী প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন (ডেইলি স্টার, ৩ মে)। এক্ষেত্রে বেটার্মিনাল সহ অন্যান্য প্রজেক্টগুলো বিদেশ থেকে নেয়া যায়।

জলাবদ্ধতা ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন : একসময় সীতাকুন্ডের এ বেল্টটি জুট বেল্ট হিসেবে পরিচিত ছিল। গুল আহমদ জুট মিল, হাফিজ জুট মিল সহ সকল বন্ধ জুট মিল চালুর জন্য ডা. মাহফুজুর রহমানসহ সবাই স্মারকলিপি দিয়েছেন। আমিন জুট মিল, চসিক ইনেশিয়েটিভে চালুর জন্য প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। মেয়র আরো বলেছেন, ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি এখন সিডিএর প্রজেক্ট, ১১টি হাল খননের দায়িত্ব আমাদের। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা নিরসনে অধিক বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা আশা করি বর্ষার পূর্বেই ন্যূনতম ডেভলোপমেন্ট মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান দেখাতে সক্ষম হবেন। সম্প্রতি মহানগর আমীর শাহজাহান চৌধুরীর নেতৃত্বে বাকলিয়ার দিকে জামায়েত ইসলামী বাংলাদেশ একটি খাল, কাট্টলীর দিকে সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি খাল খনন কার্যক্রম জনগণের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে। এই প্রজেক্টকে তারা পাবলিক প্রাইভেট পার্টিসিপেশন প্রজেক্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লাইনের প্রস্তাব রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক, চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক চার লাইন করার জন্য এলাকাবাসী ডিসি ফরিদা খানম সমীপে প্রস্তাব পেশ করেছেন।

ব্লু ইকোনমি : বাংলাদেশের বর্তমান সমুদ্র সীমা ১,১৮,৪১৩ বর্গকিলোমিটার। এতে ২০০ নাটিক্যাল মাইল বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন ও বাকীগুলো সমুদ্র রয়েছে। বর্তমানে ২৫০ জাতের মিঠা পানির মাছ এর বিপরীতে সাগরে রয়েছে অন্তত ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন টন মাছ ধরা পড়ে। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৭০ মিলিয়ন টন মাছ বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা আহরণ করে। যার সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে এ অঞ্চলে বিদেশি পর্যটকের ঢল নামবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলোতে। এছাড়াও বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তথ্যমতে, ২০২৮ সালের মধ্যে এ শিল্প হতে ২৯ কোটি ৭০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ১০.৫ ভাগ। চীনের সাংহাই Port Land Economic Development ধারণা প্রণয়ন করেছেন। বাংলাদেশের সরকার চট্টগ্রাম বন্দরে এ মডেল অনুসরণ করছেন।

স্বাস্থ্য : করোনার পর থেকে দৈনিক আজাদী ও আমরা অনুজীব গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন সহ করোনার মতো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রত্যেক সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে স্পেশ্যাল কর্নার, বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছিলাম। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল ও ইনফেকশন ডিজিজেস এ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ এর ভিসির দায়িত্ব নিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৪টি সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বিএসসি নার্সিং ইন্সটিটিউট এর আওতায় রয়েছে। বর্তমানে ফৌজদারহাটে ইউনিভার্সিটির কোন অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। জনগণ মনে করে কুমিরা রেল স্টেশনের পাশে রেলওয়ের পরিত্যক্ত ১০ একর টিবি হাসপাতাল, সংশ্লিষ্ট আরো ৩০ একর জায়গা নিয়ে (তথ্য : রেলওয়ের ভূমি সম্পদ বিভাগ) এটাকে আধুনিক স্থাপত্যে গড়ে তোলা যায়। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল করেছে। কিডনি ফাউন্ডেশনকে সরকারি প্রণোদনা বর্ধিত করার জন্য প্রস্তাব করছি।

চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে শুধু মহানগরের উন্নয়ন নয় :চট্টগ্রামের উন্নয়ন” বলতে টিপিক্যালি এখন নগর উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে। সীতাকুণ্ড, মিরসরাই বা হাটহাজারী, রাউজান হয়ে Greater Hill Tract এর সম্পদ, সম্ভাবনার কথা ভাবা হচ্ছে না। এর জন্যও একটা মাষ্টার প্ল্যান তৈরী এখন সময়ের দাবী। অন্যদিকে কালুরঘাট ব্রিজের অপর পাড় বা শাহ আমানত সেতুর অপর পাড়ে যেখানে KAFCO, CUFL, Korean ঊচত সিমেন্ট, সিআই শীটসহ অনেক ভারী শিল্প পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২০টি থানার ৭টি রয়েছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে। সামগ্রিকভাবে উক্ত এলাকা সমূহে Urbanization চূড়ান্ত পর্যায়ে। বাংলাদেশে ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বৃহত্তর চট্টগ্রামে অবস্থান করে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট বান্দরবানে ৪.৪৮০ স্কোয়ার কিলোমিটার reserved forest রয়েছে। বান্দরবানে রয়েছে পর্যটনের মিনি এভারেষ্ট আকর্ষণীয় চিমবুক, ক্রেওক্রাডং।

১২০ কিলোমিটারে Worlds Longest Unbroken Natural Beach সমৃদ্ধ পর্যটন শহর কক্সবাজার হয়ে উঠছে বাণিজ্য, শিল্পনগরী। সীফুড, সল্টেড এন্ড ডিহাইড্রেড ফিস, ফ্রোজেন ফুড, টিম্বার, উড প্রোডাক্টস, শতাধিক হ্যাচারীশিল্প তার প্রমাণ। তাছাড়া চীন, থাইল্যান্ডমায়ানমার পণ্য এখন কক্সবাজার। গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রস্তাবনা এই সম্ভাবনাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে। সম্প্রতি চিন্তক সলিমুল্লাহ খানের উদ্যোগে কক্সবাজারমহেশখালী সিট্রাক চালু করেছেন। এতে করে পান, শুটকি, পর্যটন ইত্যাদি খাতে বাণিজ্য বিকশিত হবে। এসবের উন্নয়ন মানে চট্টগ্রামের উন্নয়ন।

সবিনয় নিবেদন

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, হাজার বছর ধরে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী, মহা বন্দর নগরী, প্রাচ্যের ভেনিস, বিভিন্ন সাঅলংকারে বিশেষণ পেয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে তীরে বিরহ গীত গেয়ে চলেছে জনগণ। এ যেন সারাজীবনের বারোমাইস্যা বিষাদ জীবন। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের ভূমিপুত্র হিসেবে আপনার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রাম উন্নয়নের জন্য সবিশেষ নজর দেবেন। এটি আমাদের আকুল আবেদন।

লেখক : সাবেক সচিব ও প্রধান নির্বাহী, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি; কবি, প্রাবন্ধিক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ড উপকূলে জেটি নির্মাণ ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ জরুরি
পরবর্তী নিবন্ধগাছবাড়িয়া হাশিমপুর বরুমতি মহাশ্মশানের উন্নয়ন কাজ শুরু