কুষ্টিয়া পৌর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। যে মৌলবাদীরা জাতির পিতার ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কেউ মনে করেন তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল। আটক চারজন হলেন কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার ছাত্র আবু বকর ও মো. সবুজ ইসলাম নাহিদ এবং ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আলামিন ও ইউসুফ আলী। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে আবু বকর ও নাহিদকে ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালাতে দেখা গিয়েছিল বলে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মহিউদ্দিন জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্যের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উত্তম লাহিড়ী গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন। পরে তা বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি রিটটি উপস্থাপন করে শুনানির আরজি জানান। তার সঙ্গে ছিলেন এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। আজ সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যুথি।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের বিরোধিতার মধ্যেই শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ওই ভাস্কর্যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সোয়া ২টার পর টুপি মাথায় পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুজন পায়ে হেঁটে এসে বাঁশের মই বেয়ে উঠে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই যে উসকানি দিচ্ছে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বের করে নিয়ে আসছে, এটা নিশ্চয় কারো কাম্য নয়। আমরা অবশ্যই এটা দেখব। ভাস্কর্য বসালে ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার’ যে হুমকি হেফাজতে ইসলামীর নেতারা দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার স্মৃতি ধরে রাখা হবে না, এটা তো বাংলাদেশের কোনো মানুষ মেনে নিতে পারবে না। তিনি বলেন, ভাস্কর্য মানে পূজা নয়। তাকে ধরে রাখা, তার যে অবদান দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, সেটাকে হৃদয়ে গেঁথে রাখা। যেখানে একটা ভাস্কর্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম সাক্ষী হয়ে থাকবে, সেখানে আমরা ধ্বংস করতে যাচ্ছি। এটা হলো মনমানসিকতার ব্যাপার।