‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করি, শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করি’–এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে গত শুক্রবার। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে। রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কনভেনশন হলে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২৪’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন তা বাস্তবায়নে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন, জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং বাস্তবায়ন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা দূর করে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে। এই গণমাধ্যম আমাদের মানুষের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করে জনমত তৈরিতে সহায়তা করে। মাদক–চোরাচালান বন্ধে সেই গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।
মাদক সমস্যা তথা মাদক দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার ও অবৈধ পাচার একটি জটিল, বহুমাত্রিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও চোরাচালান সমস্যা দেশ–কাল, ধর্ম–বর্ণ, সমাজ নির্বিশেষে আজ সারা বিশ্বকে গ্রাস করছে। ধনী–দরিদ্র, উন্নত–উন্নয়নশীল কোন দেশই মাদক সন্ত্রাস থেকে মুক্ত নয়। মাদককে ঘিরে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, সংঘাত–দ্বন্দ্ব, কলহ, দুর্ঘটনা, ধ্বংস ও মৃত্যুর যে খেলা চলছে তাকে নিবারণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তি আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন যথা– স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে।
তাই মাদক ব্যবসায়ী, মাদক বহনকারী ও মাদকসেবী–সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ইয়াবার মতো মাদক মানুষকে ধ্বংস করছে, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ককে নষ্ট করছে। মাদকের আগ্রাসন থেকে দেশ, সমাজ ও তারুণ্যকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে মাদক বিরোধী মানববন্ধন করা যেতে পারে। এতে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড–এ মাদক বিরোধী স্লোগান বর্ণিত থাকবে। ‘মাদকমুক্ত সমাজ আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে। মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী লিফলেট বিতরণ করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক বিরোধী প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে হবে। অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাদক বিরোধী পরামর্শ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে হবে।
মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম এসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে এগিয়ে এলে মাদক নিয়ন্ত্রণের লড়াই আরো সহজ হবে। মাদকের বিস্তার রোধের লক্ষ্যে সামাজিক ও পারিবারিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিতে হবে। মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। মাদকের ব্যবহার ও পাচার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা, আইনের ফাঁকফোকর বন্ধের বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবন থেকে মাদকদ্রব্য উৎখাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। প্রতিটি পরিবারপ্রধানকে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। পারিবারিক অনুশাসন, নৈতিক মূল্যবোধ ও সুস্থ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। এই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ভূমিকা নিতে পারে গণমাধ্যম। জনগণকে প্রাণঘাতী নেশার ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রদান করতে হবে। ‘মাদক যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে এবং আমরাই মাদককে নিয়ন্ত্রণ করব সৃজনশীলতা, কল্যাণ, শান্তি ও সৌন্দর্যের জন্য’–এটাই হোক আমাদের মূলমন্ত্র!