সিনেমা-গান-অনুষ্ঠান সবকিছুতেই মাদককে চাকচিক্য করে দেখানো হচ্ছে। স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সবখানেই ধূমপান থেকে শুরু করে মাদকের ভয়াল থাবায় কিশোর-তারুণ্য। এরই মাঝে মাদককে না বলতে চট্টগ্রামের চার তরুণ দুঃসাহসিক এক সাইকেল যাত্রায় এগিয়ে এলেন। মাদকের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ ক্রসকান্ট্রি রুটে সাইক্লিং করলেন পতেঙ্গা সাইক্লিস্ট চিটাগংয়ের চার তরুণ সাইক্লিস্ট। এরা হলেন, ইসমাঈল হোসেন নয়ন (২১), শহীদুল হক তানভীর (২২), সাইফুল ইসলাম (১৯) এবং মেহরাব হোসেন অভি (২০)।
২১ ডিসেম্বর বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে ২৯ ডিসেম্বর টেকনাফে গিয়ে শেষ হয় দেশব্যাপী এ সাইক্লিং অভিযাত্রা।
জানা যায়, বর্ডার টু বর্ডার সাইক্লিংয়ের জন্য আলোচিত রুটগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বোচ্চ দূরত্বের রুট হচ্ছে তেঁতুলিয়া টু টেকনাফ। প্রায় এক হাজার কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে হয় এই রুটে। দেশের উত্তরের সর্বেশেষ জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে দেশের দক্ষিণের সর্বশেষ জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রুটকে ক্রসকান্ট্রি রুট বলা হয়। তরুণ সাইক্লিস্ট চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের বিএসএস স্নাতকের (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইসমাঈল হোসেন নয়ন আজাদীকে বলেন, পরিবেশ প্রকৃতির ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তরুণসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখার স্লোগান নিয়ে এই রাইড শুরু করি আমরা। আমাদের স্লোগান ছিল ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান এবং মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলুন’। এই অভিযানে দেশের সর্বমোট ১২টি জেলা ঘুরেছি আমরা।
সেগুলো হলো- পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-জয়পুরহাট-বগুড়া-সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-গাজীপুর-ঢাকা-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার।
তারা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে রাইড শুরু করেন ২১ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটায় এবং উক্ত রাইড কক্সবাজারের টেকনাফ জিরো পয়েন্ট শেষ করে ২৯ ডিসেম্বর দুপুর আড়াটাই। প্রতিদিন তারা গড়ে ১২০ কিলোমিটার করে সাইক্লিং করে। রাতে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করে পরেরদিন আবারও রওনা দিতো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
শহীদুল হক তানভীর আজাদীকে বলেন, আমাদের রাইডের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উঠতি বয়সের তরুণদের অসুস্থ বিনোদন জগৎ থেকে বের করে সুস্থ বিনোদনের দিকে ধাবিত করা ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান করা। যাতে আগামীর বাংলাদেশ যারাই নেতৃত্ব দিবে তারা সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে। আমরা এই রাইডে বিভিন্ন হাট-বাজারে এসব বিষয় নিয়ে তরুণ এবং অভিভাবকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছি এবং সকলকে পরিবেশ প্রকৃতির ব্যাপারেও সচেতন হতে বলেছি। কেননা বর্তমানে পরিবেশ প্রকৃতি বেশ হুমকির মুখে।
এই চার তরুণ জানান, গাছের সীমাহীন গুরুত্ব সত্ত্বেও আমাদের বনগুলোর অবস্থা আজ হতাশাজনক। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাহাড়ধস ও নদী ভাঙনের ঘটনা। ধ্বংস হচ্ছে বসতবাড়ি, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এভাবে বাংলাদেশ হারাতে বসেছে তার চিরচেনা রূপ। এসব রোধে গাছ লাগানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তাই, সত্যিকার অর্থে বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে গাছ লাগাতে হবে নিজের স্বার্থে ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে।