এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় খুন হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুর রহমান রোহিত। রোববার এজাহারনামীয় দুই আসামি মো. মহিউদ্দিন (৩৫) ও সাইফুল ইসলাম বাবুকে (২১) ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার নগর পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। নগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ খুনের মোটিভ সম্পর্কে আসামিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে ডিসি জানান, বাকলিয়া ডিসি রোড এলাকায় মা-মনি নামে একটি ক্লাব রয়েছে। এ ক্লাবের সদস্য ছিলেন রোহিত। ক্লাবের সদস্যরা বিভিন্ন সময় মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকাটিতে সোচ্চার ছিলেন। এলাকাটিতে মাদক ও সন্ত্রাসের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মা-মনি ক্লাবের সদস্যরা বিশেষ করে রোহিত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপে রোহিত বাধা দিয়ে আসছিলেন। এতে ওই এলাকায় যারা মাদক কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত তারাই রোহিতকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ হত্যাকান্ডের সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন উপ কমিশনার।
বাকলিয়া থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, গত রোববার ঢাকার মুগদার মাদারটেক নিউ মদিনা আবাসিক এলাকা থেকে মহিউদ্দিনকে এবং মিরপুর থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, রোহিতের ওপর হামলার পরপরই মহিউদ্দিন, বাবু ও সাবু পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার এড়াতে মহিউদ্দিন তার দাড়ি কেটে ফেলে আর বাবুও চলাফেরা পরিবর্তন করে ফেলে। তারা ঢাকায় অবস্থান করে সেখান থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
ওসি নেজাম বলেন, দেওয়ান বাজার-ডিসি রোডসহ আশপাশের এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত মহিউদ্দিন ও সাবু। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেরও অভিযোগ রয়েছে। মা-মনি ক্লাবের সদস্য রোহিত এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান। বিভিন্নসময় পুলিশকে খবর দিয়ে এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন রোহিত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবু রোহিতকে খুন করার প্রস্তাব দেয় মহিউদ্দিনকে। নিজেদের এলাকায় খুন করলে তাদের এলাকাছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় রোহিতকে কৌশলে দেওয়ানবাজার ভরাপুকুর পাড় সংলগ্ন কেডিএস গলিতে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তিনি।
ওসি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোহিত জানিয়েছিল, ৮ জানুয়ারি বাবু ও সাবু কৌশলে তার মোটরসাইকেলে উঠে। কৌশলে তারাই তাকে কেডিএস গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে সে মহিউদ্দিনকে অবস্থান নিতে দেখে। বাবু ও সাবু তাকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে নেমে যায় এবং সেখানে ছুরিকাঘাত করে। ওসি নেজাম বলেন, এ হত্যাকান্ডের সাথে আরও কয়েকজন পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। কয়েকজনের নামও পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। গত ৩১ ডিসেম্বর রোহিতকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানান বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মঈন উদ্দিন।
এদিকে গতকাল অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে রোহিত হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত মহিউদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানান ওসি নেজাম।
উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারি রোহিতকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ১৫ জানুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে ৯ জানুয়ারি নিহতের মেজ ভাই জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে মহিউদ্দিন, সাবু ও বাবুকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের বাসিন্দা রোহিত ওমরগণি এমইএস কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
আমাদের আমাদের