রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চট্টগ্রাম। এই রেল স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন রুটে বিভিন্ন আন্তঃনগর-মেইল এবং লোকালসহ ১৮টি ট্রেনে ১৮ থেকে ২০ হাজারের মতো যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। আধুনিক এই রেল স্টেশনে রয়েছে ভিআইপি বিশ্রামাগারসহ প্রথম শ্রেণির ও সাধারণ শ্রেণির বিশ্রামাগার। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেশনে খাওয়ার ও ব্যবহারের পানি নিয়ে সংকটে ভুগছেন যাত্রী ও স্টাফরা। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের জন্য স্থাপিত গভীর নলকূপের পানি দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও ঘোলাটে হওয়ায় এই পানি পান করাতো দূরের কথা এগুলো ব্যবহারও করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। গতকাল ত্বন্বি দেববর্মন নামে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের একযাত্রী জানান, পানিতে লবণের মাত্রাও বেশি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে যাত্রীদের এবং রেলওয়ে স্টাফদের জন্য একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এই পানি মোটরের সাহায্যে উপরে টাংকিতে তোলা হয়। সেখান থেকে পুরো রেল স্টেশনে সরবরাহ করা হয়। গভীর নলকূপটি স্থাপনের মাত্র ৫ বছরের মাথায় সেটা নষ্ট হয়ে যায়। গত কয়েক মাস যাবত রেল স্টেশনে যাত্রীরা নষ্ট পানির ব্যাপারে অভিযোগ করে আসলেও রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখনো জরুরি কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল রেল স্টেশনে প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগারে সোনার বাংলা ট্রেনের যাত্রী মাহিদুল ইসলাম, মফিজুর রহমান এবং রমজান আলীর সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রেনের যাত্রীরা যাতে নিরাপদ পানি পান করতে পারেন এজন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল। শুরুতেই এই নলকূপের পানি বেশ ভালোই ছিল। গত কিছুদিন ধরে ট্রেনের যাত্রীরা এই পানি ব্যবহারও করতে পারছেন না। পানি ঘোলাটে ও মাত্রাতিরিক্ত আয়রন। চট্টগ্রামের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রীরা পানি না পাওয়া এটা অত্যন্ত অন্যায় এবং অমানবিক। এটা রেল কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার পর্যায়ে পড়ে। আমরা অনেকদিন ধরে অভিযোগ করে আসছি।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার তারেক মো. শামস তুষার আজাদীকে জানান, আমাদের প্ল্যান আছে। আমরা ৩-৪ মাসের মধ্যে ফয়’স লেক থেকে পরিশোধিত পানি সরবরাহ করার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ফয়’স লেকের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমাদের পাম্পের ক্যাপাসিটিও বাড়ানো হচ্ছে। সেখান থেকে পারিশোধিত পানি সরবরাহ করা হবে।
এদিকে যাত্রীদের অভিযোগের ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কান্তি চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে জানান, যাত্রীদের অভিযোগ আমি শুনেছি। আয়রনযুক্ত পানি তারা ব্যবহার করতে পারছেন না। এই ব্যাপারে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা উদ্যোগ নিবেন।
শত শত যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রেল স্টেশনের ভিআইপি বিশ্রামাগার, সাধারণ বিশ্রামাগার, ওয়েটিং রুম, স্টেশন ম্যানেজার, মাস্টারের অফিসসহ পুরো স্টেশনে সরবরাহকৃত পানিতে মাত্রাতিরক্তি আয়রন এবং ঘোলাটে হওয়ায় এই পানি পান করা যাচ্ছে না।