মাত্রাতিরিক্ত আশা শান্তি নষ্ট করে

মোহাম্মদ ওয়াহিদ মিরাজ | শনিবার , ২২ জুলাই, ২০২৩ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আশা। মাত্র দুই অক্ষরের খুব ছোট শব্দ হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। এক মাত্র পাগল ব্যতীত রাস্তার ফকির হতে শুরু করে রাজ্যের বাদশাহ পর্যন্ত সকলের মনেই কোনও না কোনও আশা থাকে। যেমন কেউ আশা করে নিজের মাবাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে পরিবার নিয়ে অফুরন্ত শান্তিতে থাকবে আবার কেউ আশা করে অন্যের মাবাবার জন্য নিজের অর্থে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করে সেখানে আমরণ সুখ খুঁজবে। একদিকে অনেকে গরীবঅসহায়দের অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজে কোটিপতি হয়, অন্যদিকে কেউ নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে সমাজের অবহেলিত মানুষদের জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় বা এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে। আমরা সচেতন দৃষ্টিতে চারদিকে তাকালে প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই এমন অহরহ উদাহরণ উপলব্ধি করতে পারবো।

বর্তমান যুগে অধিকাংশ মানুষের মনের আশাই হলো ধনপতি বা ক্ষমতাবান হওয়া। এক্ষেত্রে অনেকের আশার পরিমাণ আবার মাত্রাতিরিক্ত হয়। এরা আশা করার সময় একটুও ভাবে না যে, তার মান অনুযায়ী এমন আশা পূর্ণ করার সামর্থ তথা যোগ্যতা তার নেই। ফলে নিজে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তার আশা বাস্তবায়ন করার জন্য অন্যায় পথে পা বাড়াতেও এরা দ্বিধাবোধ করে না। কাজেই এরা সমাজ তথা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে অর্থলোভিদের কারণে যত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তার অধিকাংশের পিছনেই কারণ হিসেবে সামর্থের অতিরিক্ত চাহিদাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকে আশা নিয়ে নীরবে বেঁচে থাকলেও কিছু সংখ্যক মানুষ আবার আশা পূর্ণ করার জন্য বিপথে পা বাড়ায় বা মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত আশা অনেক সময়ে নিজের দুঃখের তথা অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মানুষ হয়েও হিংগ্র পশুর ন্যায় কাজ করতে দেখা যায়।

উঁচু সিঁড়িতে ওঠার জন্য আমাদের মনে আশা থাকার পাশাপাশি এ কথাও মনে প্রাণে অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে যে, নিজের আশা পূর্ণ করতে গিয়ে অন্যায় কাজে মনোনিবেশ করলে সে সিঁড়ি ভেঙে মহাবিপদের সম্মুখীন হওয়াও একেবারে অবাস্তব নয়। নিজে ধনপতি বা ক্ষমতাবান হওয়ার আশায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলতে বা হত্যা করতেও অনেকে দ্বিধাবোধ করে না, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রায়শ আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়। অন্যের বিপদের সময়ে আশা দিয়ে তা পরবর্তীতে পূরণ না করলেও মাঝে মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। প্রেমিক কর্তৃক বিয়ে করার আশা দিয়ে প্রেমিকার মহামূল্যবান সতিত্বসহ সর্বস্ব কেড়ে নেয়া এমন কী তাকে হত্যা করাও বর্তমান যুগে অহরহ ঘটছে। অথচ বিয়ের আশা দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা কোনও মতেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনও দেখা যায় যে, নেতা পদবীর কিছু কুলাঙ্গার তার কর্মী বা সমর্থককে পদপদবী দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে হাতে অস্ত্র সমর্পণপূর্বক অন্যায় কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে সমাজে সন্ত্রাসী হিসেবে আবির্ভুত হয়ে অনেকে শাস্তি ভোগ করলেও অনেকে আবার বাধ্য হয়ে শাস্তির ভয়ে ফেরারি জীবন বেছে নেয়। তাই তো মিথ্যা আশা তথা প্রলোভন দেয়াকে কোনও ধর্মই সমর্থন করে না, যা সৃষ্টির সেরা মানুষ হতে কোনও ক্রমেই কাম্য হতে পারে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযদি
পরবর্তী নিবন্ধসবুজ