আর কয়েকমাস পরেই অনুষ্ঠিত হবে বারইয়ারহাট পৌরসভা নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে ঘিরে সর্বত্র আলোচনায় ব্যস্ত পৌরসভার সর্বস্তরের জনসাধারণ। কে হবেন আগামীর মেয়র? কারণ তাকেই ঘিরে নতুন করে বারইয়ারহাটের ভাগ্যবদলে সিক্ত হবেন পৌরবাসী।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে পাড়া, মহল্লা, চায়ের দোকান কিংবা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সর্বত্র চলছে বিগত দিনের পৌরসভার উন্নয়নের হিসেব-নিকেষ। বিশেষ করে বারইয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ী এবং পৌরসভার বাসিন্দারা বিগত সময়ে যে সকল নাগরিক সুবিধা পাওয়ার কথা তার কতটুকু তারা পেয়েছেন তার হিসাব কষছেন। তাই আসন্ন নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী যিনি হতে পারবেন তাকেই নির্বাচিত করার মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাসিন্দাদের মধ্যে।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে যে সকল সম্ভাব্য প্রার্থী বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন তারা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ভিপি নিজাম উদ্দিন, বারইয়ারহাট পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মীর আলম মাসুক, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম খোকন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আলী আহছান ও কেরানী বাড়ি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা বারইয়ারহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফজলুল করিম লিটন। বিএনপি থেকে এখনও কোনো প্রার্থীকে মাঠপর্যায়ে নামতে দেখা যাচ্ছে না। জামায়াত বা জাপা থেকেও কেউ নেই। তাই আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ৫ প্রার্থীর দৌঁড়ঝাঁপেই নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে ওঠেছে। বর্তমান মেয়র নিজাম উদ্দিন ভিপি বলেন, ‘আমার সময়ে এই পর্যন্ত পৌরসভায় প্রায় ৪৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। আরো অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমি পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।’ তিনি জানান, তাঁর আমলে উন্নয়নের আলোকে দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীদের কাছেও তাঁর সমান গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
বারইয়ারহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর আলম মাসুক বলেন, ‘আমি ১৯৬৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন রাশেদসহ দলের হয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। দলের নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে রয়েছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে বারইয়ারহাট পৌরসভাকে মডেল পৌরসভায় পরিণত করবো।’ কর্মতৎপরতায় সকলের কাছে সমাদৃত তিনি।
এদিকে বারবার মনোনয়ন বঞ্চিত বারইয়ারহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম খোকন দীর্ঘ দুই যুগ আন্দোলন সংগ্রামে দলের দুর্দিনে রাজপথে নিবেদিতভাবে কাজ করেছেন। সকলের কাছে ইতিমধ্যে আলোচিত তিনি। বারইয়াহাটের ব্যবসায়ীদের বন্ধু হিসেবেও তিনি সমাদৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে সবসময় দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছি। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় কাউন্সিলে মাত্র ৫ ভোটের ব্যবধানে মরহুম এসএম তাহের ভূঁইয়ার কাছে হেরে যাই। ২০১৩-২০১৪ সালের বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন প্রতিহত করতে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আশা করছি দল যদি ত্যাগীদের চায় সেক্ষেত্রে আমি এবার দলীয় মনোনয়ন পাবো।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর পরিচালক আলী আহছান বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচনে জয়ী হলে বারইয়ারহাট পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো। প্রত্যেক নাগরিককে তাদের যথাযথ নাগরিক সুবিধা প্রদান করা হবে। পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধন করে পৌরসভায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আন্ডারপাস তৈরিসহ বারইয়ারহাটকে ব্যবসা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিকভাবে আরো গতিশীল করে তুলবো।’ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, চিনকি আস্তানা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কেরানী বাড়ি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুল করিম লিটন বলেন, ‘গত পৌর নির্বাচনে আমিও মেয়র প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। আশা করি, পৌর নির্বাচনে এবার দল আমাকে মনোনীত করবে।’ তবে সব দলের অংশগ্রহণে বারইয়াহাট পৌরসভার নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা বাসিন্দাদের।
উল্লেখ্য, বারইয়াহাট পৌরসভা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ভোটার সংখ্যা ৬,৬২৯ জন। পুরুষ ৩,৩৪০ জন, মহিলা ৩,২৮৯ জন।