খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় কৃষকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রসীত বিকাশ খীসা সমর্থিত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে কৃষকরা। ঘটনায় ১৩ কৃষক আহত হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরের দিকে পার্বত্য খাগড়াছড়ির সীমান্তবর্তী মাটিরাঙা উপজেলার তবলছড়ির দুর্গম লাইফু কার্বারি পাড়া এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং-তবলছড়িতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় কৃষকরা লাইফু কার্বারি পাড়া ও আশেপাশের এলাকায় নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্থানীয়রা ঘটনার দিন লাইফু কার্বারি পাড়া এলাকায় কচু চাষের জন্য টিলা ভূমিতে কাজ করতে গেলে ইউপিডিএফের ৩০/৩৫ জন কর্মী তাদেরকে বাধা প্রদান করে। এসময় ভবিষ্যতে জমিতে না আসারও হুমকি দেয়। তাদের বাধা উপেক্ষা করে যার যার জমিতে কাজ করতে গেলে তাদেরকে মারধর করতে শুরু করে। একপর্যায়ে ৬০/৭০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়। এসময় বাঙালি চাষিরা নিজেদের পাহাড় ছেড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, মো. শাহ জালাল (৫৩), শাহ জালালের স্ত্রী আয়শা বেগম (৪৬), তার দুই ছেলে নয়ন মিয়া (২৪) ও নাজমুল হক (১৫), মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩২), মো. আব্দুল খালেকের ছেলে আবদুল মোতালেব (৪৫), মো. ইউসুফ আলীর ছেলে মো. সালাহ উদ্দিন (১৯), জাফর আলীর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (৪২), মো. শফিক মিয়ার ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৩৫), আবু তাহেরের ছেলে আব্দুল আল মামুন (১৬), সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. তাজুল ইসলাম (৩৪) ও সুরুজ মিয়ার ছেলে মো. মনির হোসেন (৩০)। আহতদের সকলেই তবলছড়ি ও তাইন্দং ইউনিয়নের ইসলামপুর ও শুকনাছড়ি এলাকার বাসিন্দা।
আহতদের মধ্যে দুইজন পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে। আবু তালেব নামে একজনকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা গ্রহন শেষে বাড়ি ফিরেছে।
এ ঘটনায় আহত মো. শাহ জালাল বলেন, ঘটনার দিন নিজের স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে প্রতিদিনের মতো নিজের জমিতে কাজ করতে গেলে ইউপিডিএফ কর্মীরা আমাদের কাজ করতে বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তিনি বাঙালিদের ভূমি আর জীবন জীবিকা রক্ষায় বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান।
এদিকে ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাঙালি কৃষকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গার যামিনীপাড়া জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলী, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান, তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের ও তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ির জেলার সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, আমরা এই ধরনের ঘটনার সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত না। এখানে ইউপিডিএফকে জড়ানো যড়যন্ত্রমূলক। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।