মাও সে তুং। বিপ্লবী নেতা । আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা। স্মরণীয় হয়ে আছেন চীনা সমাজ ও সংস্কৃতিতে তার প্রভাবের জন্য। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের চেয়ারম্যান এবং আমৃত্যু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। বিবেচিত হন একজন বিশিষ্ট কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক হিসেবেও। এছাড়া তিনি বেশ কিছু বইয়ের লেখক ও কবি হিসেবেও বিখ্যাত ছিলেন। তার দর্শন মাওবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। তবে বিপ্লবী নেতা হিসেবে তিনি যতটা দক্ষ ছিলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সে পরিমাণ সাফল্য দেখাতে পারেননি। মাও সে তুং আট বছর বয়সে তার গ্রামের স্কুলে ভর্তি হন। বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে মাও বেশ কয়েকটি স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। মাও এর কিছুদিন পর হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশায় গিয়ে পুনরায় তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এসময় চীনে কিং রাজবংশ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তিনি ১৯১১ ও ১৯১২ সালের ছয় মাস এই আন্দোলনের সেনা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৩-১৮ সাল পর্যন্ত তিনি টিচার্স ট্রেনিং স্কুলে পড়াশোনা করেন। এই সময়ে তিনি বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারেন। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব তাকে খুব আকর্ষণ করে। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সে তুং বেইজিংয়ের তিয়ান আনমেন চত্বরে পিপল’স রিপাবলিক অব চায়না প্রতিষ্ঠা করে কমিউনিস্ট শাসনের ঘোষণা দেন। তখন সমগ্র চীনের নিয়ন্ত্রণ মাওয়ের অধীনে চলে আসে। প্রথমেই তিনি প্রায় ২০ থেকে ৫০ লক্ষ জমিদারদের হত্যা করে তাদের জমিগুলো দরিদ্র কৃষকদের মাঝে বণ্টন করে দেন। এছাড়া তিনি সাবেক কুওমিনট্যাংপন্থি বিরোধী দলের প্রায় আট লক্ষ লোক হত্যা করেন। তাদের মধ্যে বেশকিছু ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবীও ছিলো। ১৯৫৮-৬০ সাল জুড়ে চীনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে প্রায় চার কোটি চীনা মারা যায়। তখন এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মাও সে তুং বিপ্লবী নেতা হিসেবে সফল হলেও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ। এদিকে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মাও ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন। এসময় তার একনিষ্ঠ ভক্ত লিন বিয়াও বিভিন্ন সময়ে মাওয়ের লেখাগুলো সংকলিত করে একটি বই লেখেন ‘চেয়ারম্যান মাওয়ের উক্তি’ নামে। সমগ্র চীনাদের কাছে এটি ‘লাল বই’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।।