এতদিন আমরা জানতাম শুধু মানুষ আর কিছু পশুপাখিরাই বেঁচে থাকার জন্য মাংস খেতো। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে আফ্রিকা এবং দক্ষিন আমেরিকায় অনেক ধরনের মাংস খেকো গাছ এর সন্ধান পাওয়া গেছে যারা বিভিন্ন ধরনের পোকা মাকড়, ছোট প্রানী খেয়ে ফেলে। এমনও শোনা গেছে এমন কিছু গাছ আছে যারা নাকি আস্ত মানুষ গিলে ফেলতে পারে। সাধারণত যেটা ঘটে থাকে সেটা হচ্ছে প্রাণীরা জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন প্রাণী শিকার করে। তারপর কোনও প্রকার রান্না বান্না ছাড়াই শিকার করা প্রাণীটিকে খেয়ে ফেলে তারা। একমাত্র মানুষই তেল লবণ আর মসলা সহযোগে সেগুলো রান্না করে খায়। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন উদ্ভিদরা খাওয়ার জন্য প্রাণী শিকার করছে? যারা একটু খোঁজখবর রাখ তারা হয়তবা মাংসখেকো উদ্ভিদের নাম শুনে থাকবেন।
সত্যি কথা হলো মানুষ খেয়ে ফেলে এমন কোন উদ্ভিদের দেখা এখনো পায়নি উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। তবে কিছু উদ্ভিদ আছে যারা ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে । এদের বলে মাংস খেকো গাছ বা মাংশাসী উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদগুলো পোকামাকড়কে ধরার জন্য নানা ধরনের ফাঁদ পাতে। আর বোকা পোকামাকড়ও সেই ফাঁদে সহজেই ধরা পড়ে। যেমন কলস উদ্ভিদের কথাই বলা যাক। এই গাছটি দেখতে অনেকটা কলসের মতো। তাই এর নাম কলস উদ্ভিদ। এই কলসের উপরের দিকে ফুলের মতো দেখতে লাল রঙের চমৎকার একটি অংশ থাকে। এই অংশে মধুর মতো রস নিংসৃত হয় যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। মধুলোভী পোকামাকড় এই কলসের উপরে বসে মধু সংগ্রহ করতে গেলেই ঘটে যায় বিপত্তি। কারণ পিচ্ছিল কলসের উপর বসার কিছুক্ষনের মধ্যেই সে পা পিছলে কলসের মধ্যে পড়ে যায়। এরপর কলসের ভেতরের এক ধরনের বিষাক্ত রস এই পোকাটিকে আটকে ফেলে। তারপর কলস উদ্ভিদ আরও কিছু রসের সাহায্যে পোকাটাকে হজম করে ফেলে।
তবে সেরা মাংস খেকো উদ্ভিদ সম্ভবত ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ। আমেরিকার সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনায় এই উদ্ভিদগুলো ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রকারে পাওয়া যায়। উদ্ভিদগুলো প্রায় এক ফিটের মতো লম্বা হয়।
ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত মাংসাশী গাছ। এই গাছটির বেঁচে থাকার জন্য দরকার প্রচুর নাইট্রোজেন। ভেজা মাটিতে তাদের জন্ম বলে পোকা শিকার করে সেই প্রয়োজন মিটায় তারা। এসব গাছ দেখা যায় আমেরিকার উত্তর দক্ষিন ক্যারোলিনার সামুদ্রিক এলাকাগুলোতে। ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের রয়েছে ৬ ইন্সি লম্বা পাতা যা দেখতে দুই ভাগে বিভক্ত চোয়ালের মত। যখন কোন পোকা মাকড় এক চোয়ালে এসে বসে তখন অন্য চোয়াল অনুভতি পাওয়া মাত্র পোকা সহ চোয়ালের সাথে লেগে যায়। তবে এ ঘটনা ঘটে মাত্র আধা সেকেন্ডের মধ্যে। পাতায় থাকে এক ধরনের লালা গ্রন্থি। পাতার লালা গ্রন্থি থেকে বের হওয়া লাল তরল গ্রাস করে নেয় পোকাটিকে। পোকাটিকে খেতে পাতার সময় লাগে দশ দিন । দুই অংশ আবার আলাদা হয় নতুন শিকারের আশায়। আবার অবশ্য অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ভেনাস ট্র্যাপ অন্যান্য উদ্ভিদের মতো নয় কেন ? তারা জল হাওয়া না খেয়ে পোকামাকড় খায় কেন ? এই প্রশ্নগুলোর একটা উত্তর দেওয়া যায় এইভাবে যে এই গাছের স্বভাবটাই এই রকম। তাই ওরা পোকামাকড় ধরে খায়। কিন্তু তাতে আসল ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হবে। আসলে ভেনাস ট্র্যাপের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর নাইট্রোজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই উদ্ভিদ জন্মে সাধারনত জলাভূমিতে। জলাভূমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম থাকে। তাই এই উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন যোগাড় করতে হয় পোকামাকড় খেয়ে।আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশেও এই মাংস খেকো গাছদের দেখা মিলে। এদেরকে মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায়। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কিছু কিছু বনে এই মাংস খেকো গাছ এর কিছু কিছু প্রজাতি দেখা যায়। দক্ষিন আমেরিকার এ্যামাজন বনে অনেক মাংস খেকো গাছ বা উদ্ভিদের দেখা মেলে। সেই উদ্ভিদগুলো আস্ত পোঁকা মাকড় এবং ছোট ছোট প্রানী খেয়ে ফেলে।