মা মাছের সুরক্ষায় সিসি ক্যামেরা

আওতায় এল হালদার ছয় কিমি এলাকা

রাউজান প্রতিনিধি | রবিবার , ১৪ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

মুজিববর্ষে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়। নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবার হালদা পাড়ের আট পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এই নদীতে প্রতি বছর কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। এপ্রিল মাসে এখানে মাছের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন মৌসুম শুরুর আগে এই ক্যামেরা স্থাপন করা হয় মাছ চুরিসহ মাছের জন্য ক্ষতিকারক তৎপরতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের গতিবিধি শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করতে। নৌ পুলিশের বসানো আটটি ক্যামেরায় প্রজনন ক্ষেত্রের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা কাভার করছে। তবে হালদা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর প্রজনন ক্ষেত্রের অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকা সিসি টিভির আওতায় আনতে হবে। নৌ পুলিশের পাশাপাশি একটি বেসরকারি সংস্থাও বাকি এলাকায় ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, হালদা নদীতে জাল পেতে মা মাছ নিধন, বালু উত্তোলন, ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালাচল বন্ধ রাখতে আইন করেছে সরকার।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মিজানুর রহমান জানান, স্থাপন করা ৮টি ক্যামেরা ছাড়াও নদীপাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরও ৩/৪টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। স্থাপন করা আটটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন (পিটি জেড, ৩৬০ ডিগ্রি, ২ কিলোমিটার জুম) ক্যামেরার মাধ্যমে মদুনাঘাট থেকে আমতোয়া পর্যন্ত মনিটরিং করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা ক্যামেরাসমূহ স্মার্টফোনে বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।
তিনি জানান, নৌ থানার আওতায় হাটহাজারী উপজেলার রাম দাশ মুন্সির হাটে বসানো হয়েছে অস্থায়ী নৌ-পুলিশ ক্যাম্প। নদীর পাড়ে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরায় নদীতে ক্ষতিকারক কিছু ধরা পড়লে সাথে সাথে ছুটে যাচ্ছে পুলিশ দল। ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার অবৈধ জাল পাতার দৃশ্য দেখে অভিযানে গিয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৭ হাজার মিটার অবৈধ ঘের জাল জব্দ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই নদীতে এই পর্যন্ত ২৮টি ডলফিন মারা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নদীতে চুরি করে পাতা জালে আটকে ও বালুবাহী যান্ত্রিক নৌকার ডুবন্ত পাখার আঘাতে এসব ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। হালদায় একের পর এক বিরল প্রজাতির ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবেশবাদীদের উদ্বেগের মধ্যে হালদার মা মাছসহ ডলফিন হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। এরপর থেকে এই নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় আমরা আশাবাদী হয়েছি। নদীপাড়ে নৌ-থানা ক্যাম্প স্থাপন ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার মাধ্যমে নদীতে উৎপাতকারীদের শনাক্ত করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, এখন আমাদের ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী ম্যানুয়ালি হালদা নদীর মা মাছ পাহারা বা সুরক্ষায় কাজ করছে। কিন্তু এত বড় একটি নদীকে এত কম মানুষ দিয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব না। এই জন্য আমরা অনেকদিন ধরেই সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা বলে আসছিলাম। এই ক্যামেরাগুলো বসানোর ফলে কয়েকটা সুবিধা পাওয়া যাবে। যেকোনো স্থান থেকে নদী নজরদারি করা যাবে, রাতেও নদীতে কেউ জাল বসাচ্ছে কিনা, বালি উত্তোলন বা ডলফিন হত্যা করছে কিনা, অবৈধ কিছু করা হচ্ছে কিনা, সেটা বোঝা যাবে। সেই সঙ্গে যারা অবৈধ মাছ ধরে বা বালু তোলে, তাদের মধ্যেও একটা ভীতি তৈরি হবে।
প্রায় ৮১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হালদা নদী দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে হালদায় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউসের মতো কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। এসব ডিম সংগ্রহ করে কার্প পোনা উৎপাদন করা হয়। হালদায় ডিম সংগ্রহে গত বছর ১৪ বছরের রেকর্ড ভাঙে। গত বছর হালদা থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর
পরবর্তী নিবন্ধমেগা প্রকল্পে সমন্বয়ের চিন্তা