মা–বাবা বিধাতার দেওয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত এবং উপহার সন্তানের জন্য। আবার সেই মা–বাবা পরিপূর্ণ হন সন্তানের আগমনে। সন্তান আগমনের পূর্বে মা–বাবা কখনোই ভাবেন না সন্তান কেমন হবে! ভালো না মন্দ হবে, সুস্থ না অসুস্থ হবে! মা–বাবা কেবল মা–বাবা হতে পারলেই যেন বেহেশতের চাবি হাতে পেয়ে যান। যাদের সন্তান নেই তারা একটি সন্তানের জন্য কাতর থাকেন।
মা–বাবা সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলতে কতইনা কষ্ট করে যান। সন্তান লালন–পালনে মা–বাবারা উহঃ শব্দটি করেন না। কোনও কষ্টই তাদের যেন ছুঁতে পারে না কোনও ছলে। মা–বাবা এক অন্তরিক্ষের নাম! যে সীমানায় কেবল ভালোবাসা আর স্বাচ্ছন্দ্য। প্রথম শিক্ষক হিসেবে মা–বাবাকে কাছে পাওয়া, প্রথম মা ডাকে মায়ের আত্মতৃপ্তি, প্রথম বাবা ডাকে বাবার আত্মউল্লাস, সন্তানের সাফল্যে মা–বাবার বিজয়ী কান্না, সন্তানের ভাগ্যে চিরন্তন ভরসার ছোঁয়া, সন্তানের অসুস্থতায় মা–বাবার বিচলিত প্রাণ, সন্তানের প্রয়োজনের কাছে মা–বাবার প্রয়োজন ক্ষীণ হওয়া, সন্তানের ব্যর্থতায় মা–বাবার পাশে থাকা, সন্তানের কল্যাণে মা–বাবার নির্ঘুম রাতের প্রহর, মা–বাবার কাছে চিরন্তন সুখে থাকা, লালিত–পালিত হওয়া, মা–বাবার ছায়াতলে থাকা, বিপদের পরম আশ্রয়ে মা–বাবাকে কাছে পাওয়া, বটবৃক্ষ হিসেবে বাবাকে এবং ছায়া হিসেবে মা কে পাওয়ার সেই সৌভাগ্যের সময়টা আমার কাছে ‘এ বেলা’। আর আমার কাছে ‘ও বেলা’ হলো, যে বেলায় কিছু সন্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মা–বাবার প্রতি অবহেলার চরম ও নির্মম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেয়। ‘ও বেলায়’ এসে মা–বাবার প্রশান্তির জায়গা হারিয়ে যায়। ‘ও বেলায়’ এসে মা–বাবাকে ঠাঁই করে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানকে কাছে পাওয়ার আকুতিতে ‘ও বেলা’ বড্ড অসহায় করে দেয়। ‘ও বেলা’ যেন অভিশপ্ত পদ্ম পুকুর, যেখানে মানুষ ডুব দিলে আর উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে না। হাহাকার আর শূন্যতা যেন ‘ও বেলার’ খোরাগ। আমরা সন্তানেরা কি পারি না ‘ও বেলা’ মুছে ‘সে বেলা’ ফিরিয়ে আনতে, যে বেলায় আমরা মা–বাবার বুকে প্রশান্তি মনে ঠাঁই নিয়ে চিরসুখের অভিলাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে মিলিত হবো সকলে? আমাদের যে পারতেই হবে। তা না হলে মা–বাবার বুকে সন্তান কামনার প্রয়াস যে কলঙ্কিত হবে!