দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে প্রথমবারের মতো ইন্দোনেশিয়ান ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন বড় মহেশখালীর শুকরিয়া পাড়ার কৃষক মো. আনছার উল্লাহ। মহেশখালীর মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা সহিষ্ণু এই নতুন জাতের ধান চাষে ফলন হয়েছে ভালো। ধানের আশানুরূপ উৎপাদন দেখে এলাকার অন্যান্য চাষিও উৎসাহিত হচ্ছেন।
পুষ্টিবিদদের মতে, বাজারের সাধারণ চালের চেয়ে এ চাল তিনগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। কুচকুচে কালো দেখতে চাল ফুটিয়ে যে ভাত হয় আপাতদৃষ্টিতে তাও কালো বর্ণের দেখায়। তবে ভালোভাবে দেখলে বুঝা যাবে, ভাত ঠিক কালো নয়– বরং গাঢ় বেগুনি। যা কিনা সাদা ভাতের তুলনায় পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। বিশেষত ক্যানসার প্রতিরোধে কালো ভাত যথেষ্ট সহায়ক বলে পুষ্টিবিদদের দাবি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল এক সময় নিষিদ্ধ চাল নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাস বলে প্রাচীনকালে চীনের রাজা–বাদশাহদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গোপনে চাষ করা হতো এই ব্ল্যাক রাইস। প্রজাদের জন্য চাষ করা বা খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল এই ধান। এ কারণে এই ধানকে নিষিদ্ধ ধান বলা হতো। পরবর্তীকালে জাপান, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ধান চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই ধান এখন চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও। তারই ধারাবাহিকতায় মহেশখালীতে এই প্রথম ব্ল্যাক রাইস ধান চাষ হয়েছে। বিদেশি এই চাল সহজে পাওয়া যায় না, কোথাও পাওয়া গেলেও দুর্লভ এই চালের কেজিপ্রতি মূল্য প্রায় ৫শ টাকা। উপজেলার মধ্যে এই প্রথম কৃষক মো. আনছার উল্লাহ পরীক্ষামূলকভাবে চাষে সফলতা পেয়েছেন।
আনছার উল্লাহ বলেন, ইউটিউবে প্রতিবেদন দেখে ব্ল্যাক রাইস সম্পর্কে জানতে পারি। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে চট্টগ্রাম থেকে ধানের বীজ এনে চাষাবাদ শুরু করি। ধানের ফলন ভালো, সময় অল্পতেই অধিক ফলন পাওয়া যায়। এই ধানে সার ও বিষ ব্যবহার না করলেও চলে। পোকা–মাকড়ের কোনো বালাই নেই। আর এই ধান থেকে যে চাল হয় তার বাজারমূল্যও বেশি। বর্তমানে এ ধানের চালের মূল্য কেজিপ্রতি মূল্য প্রায় ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে এই প্রজাতির ধান চাষ বেশ লাভজনক বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।
মিরাকেল এগ্রোর মহেশখালী উপজেলার ফিল্ড ইনচার্জ ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইশরাত মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই ধানের (ব্ল্যাক রাইস) বৈশিষ্ট্য হলো– এর গাছ, পাতা দেখতে স্বাভাবিক ধান গাছের মতো হলেও ধানের শিষ এবং চাল সবকিছুই লালচে কালো ও চিকন। এ চাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই দামও বেশি। এ ধানের চালে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অঙিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ু রোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। তিনি আরো বলেন, ব্ল্যাক রাইস ধান বিদেশি জাত। এই ধান গাছের পাতা ও কাণ্ডের রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। বীজ বপনের পর কোনোটির পাতা সবুজ আবার কোনোটির পাতা বেগুনি হলেও চালের রং কালোই হয়।
বড় মহেশখালী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হোছাইন আহমদ মাহফুজ বলেন, মহেশখালী উপজেলায় সরকারিভাবে এখনো ব্ল্যাক রাইস প্রজাতির চাষাবাদ শুরু হয়নি। এই জাতের ধানের চাষ এই প্রথম। আমার ব্লকের কৃষক মো. আনছার উল্লাহ ইউটিউব দেখে পরীক্ষামূলক চাষ করেন। তাকে কারিগরি সহায়তাসহ সবধরনের পরামর্শ দিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আগামীতে আরো ব্যাপক হারে বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল উচ্চ আঁশযুক্ত একটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এটি দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্ল্যাক রাইসে ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের দুটি জাত আছে। দুটি ধানই বাংলাদেশে চাষ উপযোগী। বড় মহেশখালীর কৃষক মো. আনছার উল্লাহর কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মহেশখালীতে এই জাতের সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ কাজ করবে।