সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে মিষ্টি রসালো ফল আঙুর। সুতা ও বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা সেই ফল ও লতার পরিচর্যায় ব্যস্ত ফজলুল করিম ফয়েজ নামের একজন যুবক। ফজলুল করিম শুধুমাত্র একজন আঙুর চাষি নন, তার রয়েছে আরো একটি পরিচয়। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি মহেশখালীর মাটিতে প্রথমবারের মতো আঙুর চাষে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। আঙুর বিদেশি ফল, দেশে চাষ করলে টক হয়, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আঙুর চাষ সম্ভব নয়– এমন ধারণাকে পাল্টে দিতে কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বিভিন্ন জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে আবাদ শুরু করেন তিনি। কর্ম উদ্যমী এই উদ্যোক্তা এখন স্বপ্ন দেখছেন ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো কঙবাজার জেলায় তার আঙুর চাষ বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিবেন এবং পুরো জেলায় বিক্রি হবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আঙুর। মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক জানান, চার বছর আগে তিনি ইন্টারনেট থেকে আঙুর চাষের বিষয়ে প্রথম ধারণা নেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ভারতের কলকাতার এক আঙুর চাষির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তিনি অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কলকাতা থেকে মাত্র ৩০টি আঙুরের চারা এনে চাষ শুরু করেন। সেখান থেকে ৩টি চারা মারা গেলেও বাকি ২৭টি থেকে ফল ফলাতে এবং চারা উৎপাদন করতে সক্ষম হন। বাড়ির পাশের কয়েক শতক জায়গা জুড়ে তিনি আঙুরের বাগান করেছেন। তিনি জানান, শিক্ষকতায় আছেন প্রায় সাড়ে ৪ বছর। পাশাপাশি আঙুর নিয়ে কাজ করেন। এ পর্যন্ত তিনি আঙুর চাষে পুঁজি খাটিয়েছেন ২ লাখ টাকা। আয় করেছেন তার কয়েকগুণ। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই ১২০ কেজি আঙুর বিক্রি করেছেন। শুধু আঙুর বিক্রি নয়, কেবল চারা বিক্রি করেই আয় করেছেন ৫ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রায় সর্বত্রই এই ফলটির চাহিদা থাকলেও আবহাওয়া, মাটি ও বাণিজ্যিক চাষের জ্ঞানের অভাবসহ নানা কারণে এদেশে এই ফলটি চাষের আগ্রহ খুব একটা দেখা যায়নি। তাই আমি এদেশে আঙুরের শ্বাসে উদ্বুদ্ধ করতে এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে আমার উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের আঙুর ছাড়া কঙবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করে আঙুর চাষকে ছড়িয়ে দেয়া। আমার আশা– আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে কঙবাজার জেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আঙুর বাজারজাত হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মাটিতেও মিষ্টি আঙুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। মহেশখালী উপজেলায় আঙুর চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে মনে করি। তিনি বলেন, ফজলুল করিম ফয়েজ একজন আদর্শ শিক্ষক, তার পাশাপাশি তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। আমি তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং তাকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।