শুরু হয়ে গেছে ঈদযাত্রা। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। দুর্ভোগ মাড়িয়ে, যানজট এড়িয়ে মানুষের এই বাড়ি ফেরা তবু আনন্দের। প্রতিবছর ঘরমুখো মানুষের এ যাত্রায় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে–ট্রেন, বাস ও লঞ্চের টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে বিড়ম্বনা, ট্রেন ও বাসের শিডিউল বিপর্যয় ও যানজট। ঈদের আগে বলতে গেলে ঢাকা বা চট্টগ্রামের মত শহরগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। নিরাপদে ঈদ যাত্রার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও মানুষের উদ্বেগের শেষ নেই। জানা যায়, সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনলাইনে আগাম টিকিট বিক্রি করেছে এবং দূরপাল্লার পরিবহনগুলো তাদের টিকিট সমূহও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। জলপথে লঞ্চগুলোও তাদের যাত্রীসেবার পরিধি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবুও ঈদের দুই তিন আগে সড়কপথ, রেলপথ এবং পানিপথে যাত্রীসাধারণের ভিড় বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা দেশের অসংখ্য মানুষ ঈদের আগের দিন বা দুই তিন দিন আগে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার জন্য বসে থাকে। ফলে সড়কপথ সমূহে তৈরি হয় ভিড়, লেগে থাকে যানজট।
বলা জরুরি যে, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জের বিষয়। নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদযাত্রায় ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কিছু কারণ রয়েছে এবং প্রতি বছরই উৎসব উদযাপনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, আহত হয় অনেকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তি–বিড়ম্বনার কারণ।
আমরা জানি, ঈদযাত্রায় মানুষ প্রধানত সড়ক ও নৌপথের ওপরই ভরসা করে। তাই সড়ককে নিরাপদ রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা এবং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়ে যায়। এছাড়া ঈদের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটিও দুর্ঘটনার একটি কারণ। তাই চালকদের এ ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অসুস্থ বা ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মূলত নিরাপদ ঈদযাত্রার জন্য চাই নিরাপদ সড়ক। সড়কে শৃঙ্খলা থাকলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে। আমাদের দেশের সড়কগুলো বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে পরিকল্পনাহীনভাবে ফলে অনেক সড়কই এখন তেমন প্রশস্ত নয় ফলে একটা কিংবা দুই গাড়ি চলতে পারলেও অনেক সময় এগুলো রাস্তায় তাদের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনা ফলে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। তাছাড়া বেশিরভাগ সড়কে ঈদের সময় অপেক্ষাকৃত অদক্ষ চালক হেলপাররা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয় ফলে অনেকক্ষেত্রের এদের অবহেলার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। এর বাইরে ঈদের সময় চালকদের মধ্যেকার আগে কে গন্তব্যে পৌঁছে আবার ভাড়া জন্য গাড়ি খালি করবে সে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় যার ফলে পথে দুর্ঘটনা ঘটে।’
তাঁরা বলেন, সব মিলিয়ে ঈদযাত্রা একটা কঠিন যাত্রায় পরিণত হওয়ার আশংকা তৈরি হয় প্রতি বছর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে যেহেতু অধিকাংশ মানুষ ভ্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ঈদযাত্রায় অনেক সময় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চডুবির ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখতে পাই। সুতরাং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে তদারকির প্রয়োজন। বিশেষ করে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না তোলা এবং ট্রেনের ছাদে যাতে কোনো যাত্রী ভ্রমণ করতে না পারে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা এবং তৎপরতা বাড়ানোকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
বিশেষ করে ঈদের আগের দিনগুলোয় মহাসড়কগুলোতে যাতে যানজট তৈরি না হয়, সেজন্য দিতে হবে বাড়তি মনোযোগ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে।